স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০ গার্মেন্ট ও এর ৩৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের পাওনা রাজস্ব পরিশোধ না করা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার এ নির্দেশ দিয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। এনবিআরের শুল্ক বিভাগ সূত্রে সম্প্রতি এ তথ্য জানা গেছে।কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকার কমিশনার ড. মো. শহিদুল ইসলাম স্বারিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি রাজস্ব আহরণের উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত কোম্পানি ও কোম্পানি পরিচালকদের চলতি, সঞ্চয়ী, এফসি ও এফডিআর অ্যাকাউন্ট অপরিচালনযোগ্য বা জব্দ করাসহ সব আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।জানা গেছে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি, বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করা এবং সময়মতো নিরীা না করার অভিযোগ রয়েছে ওই পরিচালকদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া বন্ডের নানা শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের ও কোম্পানির সব অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।অভিযুক্ত গার্মেন্টের মধ্যে রয়েছে— রাজধানীর উত্তরার নাইস ড্রেসেস, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের বিউটিফুল জ্যাকেট, গাজীপুরের জয়দেবপুর ওমেগা ফ্যাশন লিমিডেট, টঙ্গী শিল্প এলাকার ভেগা গার্মেন্টস লিমিটেড, গাজীপুর কোনাবাড়ীর হানিওয়েল গার্মেন্টস, সাভারের হেমায়েতপুরের আনু ফ্যাশন, গাজীপুরের ইউনাইটেড প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং, টঙ্গীর নিশাত নগরের ড্রিফট প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, টঙ্গী পাগারের ইউইনস গার্মেন্টস লিমিটেড ও টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর টিজেঅ্যান্ড কোং। এসব কোম্পানি ও এর পরিচালকদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭১ লাখ টাকা পাওনা থাকায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের মেসার্স বিউটিফুল জ্যাকেটের ছয় পরিচালক— গোলাম সরওয়ার মিলন, ফাতেমা সরওয়ার, মির্জা রেজাউল আলম, ক্যাপ্টেন (অব.) আনোয়ারা বেগম, মির্জা বেলাল হোসেন ও কোম্পানির হিসাব জব্দ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর উত্তরার নাইস ড্রেসেস লিমিটেডের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা পাওনা থাকার অভিযোগে গার্মেন্টের তিন পরিচালক আবু আবদুল্লাহ চৌধুরী, মো. খসরু চৌধুরী ও মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।গাজীপুরের জয়দেবপুর ওমেগা ফ্যাশন লিমিডেট ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বার্ষিক নিরীা সম্পন্ন না করা ও পরিচালকদের এবং কোম্পানির হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই অভিযোগে টঙ্গী শিল্প এলাকার মেসার্স ভেগা গার্মেন্টস লিমিটেডের তিন পরিচালক মইনুল মতিন, মসিউল মতিন ও রওশন আক্তার মতিনের ব্যক্তিগত এবং কোম্পানির হিসাব জব্দের অনুরোধ করা হয়েছে।
গাজীপুর কোনাবাড়ীতে অবস্থিত হানিওয়েল গার্মেন্ট থেকে ১৩ লাখ টাকা পাওনা থাকায় এর পরিচালক বিউটি হাবিব, মো. মতিয়ার রহমান ও মো. হাবিবুর রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে বার্ষিক নিরীা কাজে সহযোগিতা না করায় সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত আনু ফ্যাশনের পারিচালক বেলাল আহমেদ ও আলমুন নাহেরের কোম্পানি হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অডিট অনিষ্পন্ন থাকা ও নিরীা কার্যক্রমে অসহযোগিতা করায় টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকার এমএম ওয়াশিং প্লান্ট লিমিডেট ও পরিচালক বেগম সমরথা খন্দকার এবং মোহাম্মদ মহসিনের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর ইউনাইটেড প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের পরিচালক শাহেদুল ইসলাম, আলমগীর কবির ও সাইফুদ্দিন কিসলু এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করার কথা বলা হয়েছে। নিরীা কার্যক্রমের উদ্যোগ না নেয়ায় ও বন্ড লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় টঙ্গীর নিশাত নগরের ড্রিফট প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেডএম বাবর (অব.), আশিক ইকবাল গণি, রেহানা রহমান ও শেরিনা রহমানের ব্যক্তিগত এবং কোম্পানির হিসাব জব্দ করার কথা বলা হয়েছে।এছাড়া এনবিআরের নানা শর্ত ভঙ্গের কারণে টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরির টিজে অ্যান্ড কোংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জোয়াদ আমিন ও তৌহিদুল ইসলাম এবং টঙ্গী পাগারের ইউইনস গার্মেন্টস লিমিটেডের পরিচালক মিরাজুল বেগম, একরামুল হুদা, সাহেলা সরকার ও সরকার মুস্তাকা আহমেদের ব্যক্তিগত ও কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।