স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, প্রদেশ গঠন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসনের ঘোষণা থাকছে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে। মূল স্লোগান থাকছে ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, আর পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’।
আগামী নির্বাচনে ইশতেহারের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুনীল শুভরায়। এক মাসের মধ্যেই ইশতেহার জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
১৯৯১ সালে আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন হলে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে ফের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করতে চায়।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, গ্রামের উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি, বস্তিবাসী ও পথশিশুদের পূনর্বাসন ও পদ্মাসেতু নির্মাণের অঙ্গীকার থাকতে পারে নির্বাচনী ইশতেহারে।
ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতিকে সামনে টেনে আনা হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি না করার ঘোষণাও থাকছে ইশতেহারে।
নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রার্থীর পরিবর্তে দলকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়েও ইশতেহারে ঘোষণা থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার রংপুর বিভাগ সংবাদিক সমিতি ঢাকার অভিষেক অনুষ্ঠানে এরশাদ নিজেও বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন। তা না হলে দু’টি দলের হাত থেকে জনগণের রক্ষা নেই।
এরশাদ বলেন, এখন ভোটাররা ভোট দেন একজন প্রার্থীকে। ১/২শ’ ভোট বেশি পেয়েও অনেকে নির্বাচিত হচ্ছে। আর যিনি মাত্র ১শ’ ভোট কম পাচ্ছেন তার কোনো মূল্যায়ন থাকছে না। তাই ভোটে বিজয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠছেন অনেকে। অনেক সময় ভোট ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে।
এখন যে পদ্ধতিতে ভোট হয় তাতে ভালো মানুষের বিজয়ী হওয়া কঠিন। এই পদ্ধতিতে কালো টাকা ও অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। তাই ভালো মানুষ প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ।
প্রার্থীর বদলে দলকে ভোট দেওয়ার নিয়ম করা গেলে কালো টাকা ও অস্ত্রের প্রয়োজন হবে না। প্রতিটি দল ৩শ’ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আসন বন্টন হবে। কোনো দল যদি ৫০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে তারা ১৫০টি আসন পাবে। তাদের দাখিলকৃত তালিকা থেকে ১৫০ জন এমপি হবেন। কোনো দল যদি ১ শতাংশ ভোট পায়, সে দল থেকে এমপি হবেন ৩ জন।
এরশাদ বলেন, কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কোয়ালিশন সরকার হতে পারে। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কমে আসবে।
এই পদ্ধতি চালু করা গেলে কোনো বিশেষ আসনে বেশি ভোট পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেন না কেউ। আর ভোটে কালো টাকা ও অস্ত্রের ব্যবহার থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ।
এদিকে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এরশাদের রাজনৈতিক সচিব প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় ও যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
১৬ সেপ্টেম্বর গঠিত এ কমিটিকে এক মাসের মধ্যে খসড়া ইশতেহার জমা দিতে বলা হয়েছে। খসড়া ইশতেহার প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের জানিয়েছেন, এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা শিগগিরই মিটিং করে চূড়ান্ত করবো।