জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ॥ দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারে আসন্ন ১০ম জাতিয় সংসদ নির্বাচনে ৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। দলীয়, ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন।
আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ দলের উর্ধ্বতন মহলে কড়া নাড়ছেন ‘মনোয়ন’ প্রত্যাশায়। তবে আগামী নির্বাচনে কক্সবাজারের ৪ আসনে রাজনীতির মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। জাতিয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকার-বিরোধীদলের নানা কর্মকান্ড সামনের নির্বাচনে দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোটের ব্যর্থতা এবং সরকারী দল হিসেবে মহাজোটের ‘অসফলতা’কে জনগণ নিবীড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেংকারী, শেয়ার বাজারে ধ্বস, ভিন্ন মতের উপর দমন-নিপীড়ন এবং হেফাজত ইস্যুকে পূঁজি করে নিজেদের জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বিরোধীদল। আর ক্ষমতাসীনরা চাইছেন, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি ও তাদের পাঁচ বছরে উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরে পুনরায় বিজয় লাভ করতে।
সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনের অর্ধ বছর অবশিষ্ট থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে এমনকি চা’র টেবিলেও চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। এই আসনটিকে বলা হয় লক্ষ্মি আসন। এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে তারাই সরকার গঠন করে আসছে বার বার। তা ছাড়া সীমান্তের নানা বৈধ-অবৈধ ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে তারা রাতারাতি আক্সগুল ফুলে কলাগাছ বনে যান।
ক্ষমতাসীন দলের একটি বিশ্বস্থ সুত্র জানিয়েছেন, কক্সবাজার-৪ সংসদীয় আসনে ক্ষমাতাসীন দল আওয়ামীলীগ এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। কক্সবাজারের ৪টি আসনের সবকটি বরাবরই বিএনপি ও জামায়াতের থাকে। কিন্তু দূর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত নির্বাচনে। এ আসনে বিএনপির শাহজাহান চৌধুরীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মহাজোট প্রার্থী আবদুর রহমান বদি পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তবে বর্তমান এমপি আবদুর রহমান বদির একটি ঘনিষ্ঠ সুত্র নিশ্চিত করেছে-এখনো বদি মনোনয়ন পাবার বিষয়টি নিশ্চিত রয়েছে। তবে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ স¤পাদক হামিদুল হক চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া ও জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ রাজা শাহ আলম মনোনয়ন চাইতে পারেন।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ দাবী করেছেন, গরীব, অসহায় মানুষকে সাহায্যসহ এ আসনের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন আবদুর রহমান বদি। তাই উখিয়া-টেকনাফে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে আবারও নির্বাচনে জিততে হলে আ’লীগের বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ৪ আসনের আওয়ামীলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা।
এদিকে বিএনপির এ আসনে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় আগামী সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি মনে করেন, এ আসনে আবদুর রহমান বদিকে হারাতে হলে নিশ্চয়ই শাহজাহান চৌধুরীর বিকল্প নেই।
তবে উখিয়া আ’লীগ বর্তমানে ও টেকনাফ-উখিয়ার উভয় দলের গ্র“পিংকে উভয়ের জন্য চলার পথে বাঁধা হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উখিয়া উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে গত সাড়ে চার বছরে শাহজাহান চৌধুরীর আস্থাভাজন দলীয় নেতাকর্মী ও তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে একের পর এক অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। যেখানেই মামলা সেখানেই উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী ও ছোট ভাই সরওয়ার জাহান চৌধুরী আসামী। শুধুমাত্র শাহজাহান চৌধুরীর ও তার পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য এসব মিথ্যা মামলার দায়ের করা হয়েছে। অথচ দিন দিন শাহজাহান চৌধুরীর জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শাহজাহান চৌধুরী ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোয়ন নিয়ে জনগনের ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি ডিগ্রি কলেজ, টেকনাফ কলেজ, উখিয়া টিভি রিলে উপ-কেন্দ্র, টেকনাফ স্থল বন্দর, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, সৌদি সরকারের অর্থায়নে উখিয়া-টেকনাফে যে সমস্ত ঘুর্ণিঝড় থেকে রক্ষার জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিপুল ভোটে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দাবী এমপি বদি কিছু সংখ্যক শিক্ষিত সমাজের কাছে নিন্দনিয় হলেও সাধারণ মানুষ তা আমলে নেয়না। পাঁচ বছরে উখিয়া-টেকনাফের ব্যাপক উন্নয়ন তার মন্দ কাজকে আড়াল করেছে। প্রায় সত্তর হাজার মানুষকে দীর্ঘদিন যাবত চাল দিয়ে সাহায্য করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আসন রক্ষার স্বার্থে দল নিশ্চয় মনোনয়ন পরিবর্তন করবে না। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী নিজ দলে প্রতিরোধের মুখে না পড়লেও শরীক দল জামায়াত তাকে এবার ছাড় নাও দিতে পারে।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হওয়ায় গতবার বিএনপির প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার শাহাজাহান চৌধুরীর আপন সহোদর শাহ জালাল চৌধুরীর পক্ষে জামায়াত জোরালোভাবে মনোনয়ন চাইবে এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছে দলটির একাধিক নেতাকর্মী।