স্টাফ রিপোর্টার ॥
ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে টানা অসন্তোষের মধ্যেই গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় একটি আনসার ক্যাম্পের রাইফেল ভেঙে আগুনে পুড়িয়েছে শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হামলায় আহত হয়েছেন ওই ক্যাম্পের অন্তত পাঁচ আনসার সদস্য।
আহতদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাইপাস এলাকায় কলোসাস অ্যাপারেলস কারখানার পাশে আনসার ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আনসার ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. নাসির আহমেদ।
আহত আনসার সদস্যরা হলেন- মো. রোকনুজ্জামান (৩০), আবু রায়হান (২৫), ক্যাম্প কমান্ডার আপন মোল্লা (৩২), শেখর কুমার (২৭) ও মাহালম(২৫)।
নাসির আহমেদ জানান, বিভিন্ন কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকরা সকালে কলোসাসের বাইরে এসে কর্মীদের বিক্ষোভে যোগ দিতে বলে। তাতে সাড়া না পেয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই কারখানায় ভাঙচুর শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পাশের আনসার ক্যাম্পে চড়াও হয়।
এসময় আনসাররা ক্যাম্পে আটটি রাইফেল ও ১৩৫ রাউন্ড গুলি রেখে পালিয়ে যায় এবং এরপর কলোসাল গার্মেন্টের সামনের রাস্তার ওপর শ্রমিকরা অবস্থান নেয়। সেখানে চারটি রাইফেল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আর বাকি চারটি পরে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান নাসির।
এদিকে সকালে গাজীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে সাংবাদিক পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অন্তত ২০টি যানবাহন ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া সহিংসতা এড়াতে অর্ধশত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া রওশন সড়ক এলাকায় সফি প্রসেসিং ইন্ড্রাস্ট্রিজ ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা আগুন নেভায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।
জয়দেবপুর থানার উপ পরিদর্শক মোবারক হোসেন জানান, বোর্ড বাজার, বড়বাড়ি, তেলিপাড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা সকাল পৌনে ৮টার দিকে সড়কে নেমে আসে এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে যোগ দিতে থাকে।
শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের নেমে আসে এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
পরে পুলিশ শ্রমিকদের সরাতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জবাবে শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
এদিকে জয়দেবপুর-ঢাকা মহাসড়কের তিনসড়ক এলাকায় একই দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ সময় রওশন সড়ক এলাকায় সফি প্রসেসিং ইন্ড্রাস্ট্রিজে ভাঙচুর এবং আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা।
এছাড়া শ্রমিকরা ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড়ে দিগন্ত সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে এবং কারখানায় হামলা করে ভাঙচুর করে। টঙ্গীর স্টেশন রোড এবং বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনায় শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গাজীপুর, টঙ্গী, কোনাবাড়ি এলাকার অর্ধশত কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কতৃপক্ষ।
এদিকে রোববার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, নায়াগ্রা টেক্সটাইল, চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার আইমন টেক্সটাইল অ্যান্ড হুসিয়ারি লিমিটেড ও ইকুটেক্স লিমিটেড এবং মৌচাক এলাকার হাইড্রো অক্সাইড লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করে।
তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে আসেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও মৌচাকে অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা।
গাজীপুর পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন এবং জয়দেবপুর থানার ইনপেক্টর কামরুজ্জামান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।