স্টাফ রিপোর্টার ॥ জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে কর্ম কৌশল নির্ধারণ করছে মতাসীন আওয়ামী লীগ। অবশ্য পদ্ধতিটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, শাসক দল বর্তমান সংবিধানের আলোকেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণভাবে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখবে সরকার। ওই দিন চলতি সংসদ অধিবেশনের শেষ কার্যদিবস। এ সময়ের মধ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। রোববার আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ১০ জানুয়ারি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। একে নির্বাচনের জন্য শুভদিন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। দিনটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেরুকরণ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে জাতিসংঘে প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক নির্বাচন অনুষ্ঠানের েেত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে সরকার শুধু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকারের কাঠামো নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। বিরোধী দল রাজি হলে অন্তর্র্বতী সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে একমত হয়ে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এর বাইরে বিরোধী দলকে কোনো রকম ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে তার অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন নীতিনির্ধারক রোববার জানিয়েছেন, তারা বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অপো করবেন। তবে তা কোনো বিদেশী মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নয়, অভ্যন্তরীণভাবে দুই দলের এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে হবে। সেটা না হলে সরকার তার নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হবে এবং ২৪ অক্টোবর বর্তমান সংসদ অকার্যকর করে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণার জন্য বলা হবে। সরকারের ওই নীতিনির্ধারক জানান, বর্তমান সরকার যে সংবিধান বা আইনের মধ্যে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে সে বিষয়টি দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানোর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার এেেত্র গত নির্বাচনে মহাজোট সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ জনসমর্থন এবং এ সমর্থন নিয়ে সংবিধানের সংশোধনীর উল্লেখ করে তা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে। বলা হচ্ছে, দেশের জনগণ তাদের সমর্থন জানিয়ে মতায় পাঠায়। জনগণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে। শুধু তাই নয়, এেেত্র উচ্চ আদালতের রায়ও রয়েছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকেও এসব যুক্তি তুলে ধরে বর্তমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের সহযোগিতা চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এেেত্র বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। এ দুটি বৈঠকের পর দেশে ফিরে এসে কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে দলের চূড়ান্ত কর্মকৌশল নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের মত, বিরোধী দল সম্মত হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘মিনি কেবিনেট’ থাকবে। ওই কেবিনেটের সদস্যদের অবশ্যই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হবে। তবে যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না- তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সংবিধানে অন্তর্র্বতী সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই। তাই সব দলের অংশগ্রহণে নিরপে নির্বাচনের প্রশ্নে অন্তর্র্বতী সরকার বিষয়ে সমঝোতা হলে তা সংশোধনী এনে সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে। আর সে জন্যই তারা সংসদের চলতি ও শেষ অধিবেশন পর্যন্ত অপো করবেন।
দলটির একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা না হলে তারা কী করবেন- সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি রয়েছে। আগামীতে বিরোধী দলের সরকারবিরোধী সর্বাÍক আন্দোলন মোকাবেলা নিয়ে তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। যে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা রুখে দিতে সতর্ক রয়েছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশের সশস্ত্রবাহিনী এবং আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আওয়ামী লীগ অক্টোবরের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মনোনয়নের জন্য অধিকাংশ নির্বাচনী আসনের তৃণমূল নেতাদের মতামত ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। এ সপ্তাহেই এ মতামত মূল্যায়ন শুরু করবেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মূল্যায়ন শেষ হলে অক্টোবরেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।