স্টাফ রিপোর্টার ॥ হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। কওমি মাদরাসাভিত্তিক এ সংগঠনের শীর্ষ প্রায় সব নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা থাকায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিরাজ করছে গ্রেফতার আতঙ্ক। যে কারণে শীর্ষ ওই নেতা আটকের পরদিন মঙ্গলবার হাটহাজারী মাদরাসায় একটি প্রতিবাদ সভা ছাড়া আর কোথাও হেফাজতের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত দেখানো হয়নি। সরকারের মনোভাব ও সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতারা নিজেদের মধ্যে চালাচ্ছেন আলোচনা। এদিকে হেফাজতকে নিষ্ক্রিয় করতে সরকারের নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মুফতি ওয়াক্কাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র দাবি করেছে। সংগঠনটিকে ছিন্নভিন্ন করতে নানা ভয়ভীতি বা প্রয়োজনে আরও গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও ওই সূত্র জানায়। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন পর হেফাজত আবারও সংগঠিত হয়ে নতুন কর্মসূচি দেয়ার যে পরিকল্পনা করেছিল তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনায় সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও শীর্ষ ৫ শতাধিক নেতার নামসহ সারা দেশে অজ্ঞাত দেড় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর নামে ৪৫টির সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে ইসি। গ্রহণযোগ্য কোনো আপত্তি না পেলে চূড়ান্ত নিবন্ধন পাবে দলটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দলটি শর্ত পূরণ না করা ও বিতর্কিত উল্লেখ করে নিবন্ধন দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ও মোঃ শাহ নেওয়াজ। সম্প্রতি তারা বিএনএফ সংক্রান্ত ফাইলে এ মতামত দেন। বিএনএফ সম্পর্কে দলটি নিবন্ধনের শর্ত পূরণে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর আবেদন জানালে তা নাকচ করে দিয়েছেন এ তিন নির্বাচন কমিশনার। তারা এ সংক্রান্ত নথিতে উল্লেখ করেছেন, দ্বিতীয় বার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ও মোঃ জাবেদ আলী এখনও এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারা সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটকে দলীয় প্রতীক পছন্দ করতে বলা হয়েছে। দলটি দোয়াত-কলম প্রতীক পছন্দ করায় তাদের জানানো হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ওই প্রতীক বরাদ্দ থাকায় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত অন্য প্রতীকগুলোর মধ্যে যেগুলো কোনো দলকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি তার মধ্যে একটি পছন্দ করতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী অন্তত ২২ জেলা ও ১০০ উপজেলায় দলের কমিটি ও দফতর থাকতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটার সদস্য থাকতে হবে। কিন্তু বিএনএফের তদন্ত রিপোর্টে তা পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক আবেদনে বিএনএফ ৩৬ জেলা ও ১৩৪ উপজেলায় তাদের দফতর ও কমিটি আছে বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু ইসির তদন্তে ১৯ জেলা ও ৩২ উপজেলায় বিএনএফের দফতর ও কমিটির হদিস পাওয়া যায়। এরপর ৪ আগস্ট বিএনএফ সময় বাড়ানোর আবেদন করলে দলটিকে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। এরপর ইসি দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করে ২৬ জেলা ও ৮৮ উপজেলায় বিএনএফের দফতর খুঁজে পায়। উল্লেখ্য, বিএনএফকে নিবন্ধন না দিতে নির্বাচন কমিশনে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় বিএনপির পাশে বিএনএফ নামের একটি দলকে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। এ দলটি বিএনপির প্রতীক, জিয়ার ছবি এবং জিয়ার ১৯ দফা ব্যবহার করেছে বলে তাদের অভিযোগ।