স্টাফ রিপোর্টার ॥ জ্বালানি খরচ অত্যধিক। ত্রুটি রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (কুলিং) ব্যবস্থায়। ক্লাচ প্লেটও বসেনি ঠিকমতো। এর ওপর ইঞ্জিনের বিকট শব্দ। ভারত থেকে আমদানি করা ত্রুটিপূর্ণ এমন সব এসি বাস নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। মাস না পেরোতেই চালু করা বেশ কয়েকটি বাস বিকল হয়ে গেছে। যাত্রী অসন্তোষের আশঙ্কায় ডিপোতেই বসিয়ে রাখা হয়েছে ৪০টি বাস।
ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় ভারতের অশোক লেল্যান্ডের কাছ থেকে ৮৮টি এসি বাস কেনে বিআরটিসি। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৮২ কোটি টাকা। কিন্তু শুরু থেকেই বাসগুলোয় নানা ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।
বিআরটিসি বলছে, চুক্তি না মেনে বাসগুলোয় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছে অশোক লেল্যান্ড। এজন্য দেশে আসার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তারা (বিআরটিসি) স্বীকৃতিপত্র দেয়নি। পাশাপাশি ক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ অর্থও আটকে রাখা হয়েছে।
গত ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ এসি বাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ৩০টি বাস রাজধানীর বিভিন্ন রুটে পরিচালনার ঘোষণা দেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১৪ জুলাই গাজীপুর-মতিঝিল রুটে ১০টি বাস চালুও হয়। তবে নিম্নমানের ইঞ্জিনের কারণে মাত্র ৫১ কিলোমিটার পথে এক ট্রিপে (যাওয়া-আসা) এ বাসে ডিজেল লাগে প্রায় ৯০ লিটার। এতে শুধু জ্বালানি বাবদই ট্রিপপতি ব্যয় দাঁড়ায় ৬ হাজার ১২০ টাকা। ৪০ সিটের এ বাসগুলো থেকে প্রতি ট্রিপে বিআরটিসির অর্জন হয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। ট্রিপপ্রতি ১ হাজার টাকা লোকসান হওয়ায় এক মাস না পেরোতেই মতিঝিল-গাজীপুর রুটের এ বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআরটিসি। বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিয়েও সে সময় অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
এদিকে ৪ আগস্ট দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে এসি বাসগুলো পরিচালনা শুরু করে বিআরটিসি। এজন্য সারা দেশে বিআরটিসির ১৩টি ডিপোয় এসি বাস পাঠানো হয়। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বাসগুলোর বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে ১৪টি চিঠি আসে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে। ১০টি চিঠিতেই অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেন ডিপো ব্যবস্থাপকরা। কয়েকটি বাসের ব্যাটারিও এরই মধ্যে বসে গেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় ত্রুটির কথা উল্লেখ করে চিঠিতে আরো বলা হয়, এসি চললেও বাসের ভেতর ঠাণ্ডা অনুভূত হয় না। বেশকিছু বাসের ক্লাচ প্লেট ঠিকমতো বসানো হয়নি। এতে গাড়ির গিয়ার পরিবর্তনে সমস্যা হয়। কোনো কোনো বাসের ইঞ্জিন আবার বিকট শব্দ করে। এছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুর ডিপোর একটি বাসের দরজা এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। দরজাটি আর খুলছে না বলে চিঠিতে জানান ডিপো ব্যবস্থাপক আলমাস আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক (বিআরটিসির পরিচালক, কারিগরি) কর্নেল মো. আবদুল্লাহিল করিম বলেন, নতুন এসি বাসগুলোয় এরই মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অশোক লেল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সেগুলোর সমাধানও করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি বলেই এসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো সমাধানে আগামীকাল অশোক লেল্যান্ডের প্রতিনিধি এবং ১৩টি ডিপো ব্যবস্থাপক ও কারিগরদের ডাকা হয়েছে। উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে জটিলতা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বাসগুলোর ক্রয়মূল্যের ৮০ শতাংশ অর্থ অশোক লেল্যান্ডকে পরিশোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কোনো সমস্যা না পাওয়া গেলে বা বাসগুলো ঠিকমতো চলাচল করলে স্বীকৃতিপত্র দেয়ার কথা ছিল। এরপর বাকি ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে নতুন অবস্থায় বাসগুলোয় নানা ত্রুটি দেখা দেয়ায় এখনো অশোক লেল্যান্ডকে স্বীকৃতিপত্র দেয়া হয়নি। বাকি ২০ শতাংশ অর্থও পরিশোধ হয়নি। ত্রুটিমুক্ত হওয়ার পর তা পরিশোধ করা হবে।
রাজধানীর মতিঝিল ডিপো থেকে চারটি রুটে ১০টি বাস চলাচলের জন্য বরাদ্দ থাকলেও চলছে পাঁচটি। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চারটির পরিবর্তে চলছে দুটি। এর পরও যাত্রী মিলছে না। ফলে ১২-১৫ জন যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে ৪০ আসনের বাসগুলো। এ বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেয়া হয় ৫৯০ টাকা। ঢাকা-কক্সবাজার রুটের বাসে প্রতিদিন চলাচল করে ২০-২৫ জন যাত্রী। এ রুটে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা।বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপো ব্যবস্থাপকরা জানান, বেসরকারি বাসের সমান ভাড়া নিলেও নিম্নমানের এসিতে ঠাণ্ডা কম হওয়ায় যাত্রীরা সন্তুষ্ট নয়। জ্বালানি ব্যয় বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে ভাড়া কম নেয়ারও সুযোগ নেই। ফলে বিআরটিসির এসব এসি বাসে ভ্রমণ করতে যাত্রীরা আকৃষ্ট হচ্ছে না।