আজ দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে পারে ঐশী

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: পুলিশ দম্পত্তি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যার ঘটনায় আটক মেয়ে ঐশী রহমান ও তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনি এবং কাজের মেয়ে সুমির রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার। আজ তাদের আদালতে নেওয়া হবে।

বাবা-মাকে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারে ঐশী রহমান এমনই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তবে আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রিমান্ডে ঐশীর দেয়া তথ্য জানানো হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে ‘চামেলী ম্যানশনে’র ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত্যাকাণ্ডটি তাদের মেয়ে ঐশী রহমান নিজেই ঘটিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। রিমান্ডে ঐশীর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যগুলো যাচাই বাছাই করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খুনের সময় কারা উপস্থিত ছিল তা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় ঐশী। তবে খুনের পর প্রাপ্ত আলামত, আগে ও পরের সময় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতির আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। জনি ও সাইদুল মিলে হত্যাকাণ্ডের যে তথ্য ঐশী দিয়েছে তারও কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র আরও জানায়, স্বাভাবিকভাবে খুনের ঘটনায় যদি একাধিক ব্যক্তি অংশ নিতো তাহলে ছুরি একটা থাকতো না। সবার হাতেই অস্ত্র থাকতো। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে শুধুমাত্র একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ছুরি দিয়ে তিনজন কোপানোর বিষয়টি একেবারে কাল্পনিক। আর খুনের আগে জনি ও সাইদুলের প্রবেশ এবং বাহির হওয়া নিয়ে ঐশীর দেয়া বক্তব্য ভিত্তিহীন। যদি তারা গাড়িতে করে আসতো তাহলে রাত নয়টা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত গাড়ি রাখার আলামত আসতো, দারোয়ানরা বিষয়টি জানতে পারতো। আর গাড়িতে করে না এসে তাদের পালানোর চিহ্ন পাওয়া যেত, কিন্তু কোনটিই পাওয়া যায়নি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে ঐশীর কাছ থেকে যে খুনের বর্ণনা পাওয়া গেছে তাতে অন্য লোকের সেখানে উপস্থিতি অসম্ভব না। আর তাতে মনে হয়েছে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনা ঐশী নিজেই ঘটিয়েছে, এমনকি চেতনানাশক যে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে ঐশী নিজেই তা দোকান থেকে কিনে নিয়ে গেছে।

খুনের পর সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে যে আলামত সংগ্রহ করেছে তাতেও তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান কর্মকর্তারা। এ থেকে ধারণা করা যায়, ঐশী নিজেই তার বাবা-মাকে খুন করেছে।

এদিকে কাজের মেয়ে সুমি জিজ্ঞাসাবাদে বলছে, জনি ও সাইদুলের নাম সে ঐশীর কাছে শুনেছে। কিন্তু খুনের সময় সে দেখেনি। এতেও স্পষ্ট হয় খুন সংঘটিত হওয়ার সময় বাসায় অন্য কেউ ছিল না।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, ঐশীর সমস্ত কথার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার দেয়া তথ্য ও আমাদের প্র্রযুক্তিগত কিছু বিষয় তার সামনে উপস্থাপন করলে ঐশী নিশ্চুপ থাকছে। তাতেও খুনের সঙ্গে ঐশীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে।

এদিকে রিমান্ডে এসে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেছিল খুনের ঘটনার সময় তার দুই বন্ধু জনি ও সাইদুল ছিল। তারা ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাসায় আসে। তার নিজের রুমে জনি ও সাইদুলকে সে লুকিয়ে রাখে। জনির দেওয়া চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে প্রথমে তার মা ও পরে বাবাকে অজ্ঞান করে রাত দু’টার দিকে জনি ও সাইদুল মিলে ছুরি দিয়ে উপর্যুপুরি কুপিয়ে হত্যা করে।

তবে চাঞ্চল্যকর এ খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে অন্যরা অর্থাৎ তার ঘনিষ্ট বন্ধুরা জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এ বিয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য ঐশীর দুই বন্ধু জনি ও সাইদুলকে খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু তারা ঘন ঘন নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করার ফলে দ্রুত গ্রেফতার সম্ভব হচ্ছে না।

কর্মকর্তারা জানান, শনিবার ঐশী হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি নতুবা তাদের আবারও রিমান্ডে আনা হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫