জেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর ॥ মেহেরপুরের দুজন প্রতিনিধি নিজ এলাকায় সব সময় পুলিশি পাহারায় থাকেন। তিন বছর ধরে তাঁরা অস্ত্রধারী পুলিশের পাহারা ছাড়া এলাকার কোথাও যান না। তবে জেলার বাইরে গেলে তাঁরা পুলিশ নেন না। এই জনপ্রতিনিধিরা হলেন মেহেরপুর-১ (সদর) আসনের সাংসদ জয়নাল আবেদীন ও মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মুতাছিম বিল্লাহ।
পুলিশ জানায়, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর পর জীবনের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেন। পরে তাঁর দেহরীসহ কার্যালয়, বাসভবন ও পেট্রল পাম্পে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাংসদ জয়নাল আবেদীন যখন দলীয় কর্মসূচি ও সভায় যান, তখনো পুলিশের দল তাঁর সঙ্গে থাকে।
এ ব্যাপারে সাংসদ জয়নাল আবেদীন জানান, তিন বছর আগে তাঁর ভাগনে রিপন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে খুন হন।এরপর তিনি আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।তখন নিরাপত্তা চেয়ে তিনি পুলিশ সুপার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।তাই মন্ত্রণালয় তাঁর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিয়েছে।তা ছাড়া সাংসদ হিসেবেও নিরাপত্তা পান বলে জানান তিনি।এই নিরাপত্তাকে অপ্রতুল দাবি করেন সাংসদ।তাঁর দাবি, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না।
পুলিশ জানায়, সাংসদ জয়নাল আবেদীনের ভাগনে খুন হওয়ার পর মেহেরপুর পৌর মেয়র মুছাতিম বিল্লাহ তাঁর নিরাপত্তা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন।হাইকোর্ট এক আদেশে মেয়রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।আগে তাঁর নিরাপত্তায় একজন সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তিন প্লাটুন রিজার্ভ পুলিশ ছিল।এখন সদর থানার একজন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য তাঁর দেহরী হিসেবে সার্বণিক দায়িত্বে আছেন।পুলিশি পাহারা ছাড়া তিনিও কোথাও যান না।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর পৌর মেয়রের দাবি, সাংসদের ভাগনে খুন হওয়ার পরে ওই মামলায় তাঁকে ফাঁসানো ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।এ সময় তিনি নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।দুই মাস আগেও তাঁর বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে বলে তিনি জানান।তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হয়ে পুলিশ পাহারায় ঘুরতে লজ্জা লাগে।কিন্তু উপায় নেই।’
এ ব্যাপারে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘সাংসদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে ও মেয়রকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিরাপত্তা দিতে হয়। আগে সাংসদের নিরাপত্তায় তাঁর পাম্প, অফিস, বাড়িতে পুলিশ থাকত। এখন পাম্পের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুজনই সরকারি খরচে এই সুবিধা ভোগ করছেন।’
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, দুই জনপ্রতিনিধি এলাকায় অনিরাপদ, বাইরে নিরাপদ। তাই এলাকায় পুলিশ নিয়ে ঘোরেন। একজন আদালতের নির্দেশে, অন্যজন মতার জোরে এভাবে চলছেন। তিনি এ অবস্থার জন্য তাঁদের অদূরদর্শী কর্মকাণ্ড ও রাজনীতিকে দায়ী করেন।