প্রেমের বিয়ে অতঃপর….

লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥  সৈকত আর কিমি। পুরো ক্যাম্পাস লাইফ জুড়েই যাদের মত প্রাণবন্ত জুটি আর একটিও ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে চাকরীজীবন শুরু। এবার পরিবারের সাথে সমঝোতার পালাটা সেরে দুজনের বিয়েটাও হয়ে যায়। রূপকথার মত সুন্দর সংসার ছিল তাদের। কিন্তু অল্প কদিনেই কিমির মনে হয়, সৈকত আর আগের মত নেই। আর সৈকতেরও মনে হয় এই কিমি ঠিক সেই কিমি নয় যাকে সৈকত ভালোবেসেছিল। অতঃপর অনিবার্য এক দুরত্ব…

কথাগুলো কি আপনার জীবনের সাথেও মিলে যাচ্ছে? অথচ একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু ফিরে যাওয়া যায় সেই সব দিনগুলোয়। সংসার হতে পারে বিয়ের আগের দিনগুলোর চেয়েও অনেক সুন্দর। একটু মানিয়ে নিন নিচের টিপস গুলোর সাথে।

একসাথে কিছুটা সময় কাটানঃ

নতুন বিয়ের পর মেহমান, আত্মীয় স্বজন আর বন্ধুদের আনাগোনা তো থাকবেই। তবু এর মাঝেও নিজেদের মতন করে একটু সময় বের করে নিন। প্রতিদিনই চেষ্টা করুন কিছুটা সময় পরস্পরকে আলাদা করে দেয়ার। বাইরে কোথাও যেতে না পারলে বাসায় বসেই দুজন মিলে দেখে ফেলুন রোমান্টিক কোন মুভি, দুজনের পুরোনো দিনের তোলা ছবিগুলো একসাথে দেখতে পারেন কিংবা একসাথে বসে দেখুন না একবার পুরোনো গিফট, চিঠি অথবা মেইল/এস এম এস, দেখবেন কত মজার মজার আর ভালোবাসার স্মৃতিতে ভরে আছে পুরোনো দিন গুলো। তাহলে এখন কেন নয়? মানুষ দুটো তো আপনারাই !

মনে রাখুন নিজেদের দিনগুলোঃ

উহু! কোনোভাবেই ভোলা যাবে না পরস্পরের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, প্রপোজ করা আর সেই সাথে আরো নানা ব্যাক্তিগত স্মৃতিময় দিনগুলো। মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন, ডায়েরীতে লিখে রাখুন বা রঙ্গিন কালিতে দাগিয়ে রাখুন ক্যালেন্ডারেই।

ধৈর্য ধরুনঃ

একসাথে থাকতে গেলে পরস্পরের অনেক বিষয় ভালো নাই লাগতে পারে। তার মানে এই নয় যে তুণি এর সমাধান বের করতে হবে। ধরুন, আপনি ভেবেছিলেন আপনার স্বামী/স্ত্রীটি হবেন অনেক গোছানো। কিন্তুসংসার শুরুর পর দেখলেন তিনি ঠিক ততটাই অগোছালো। কি করবেন তখন? চিৎকার জুড়ে দিয়ে লাভ নেই। বরং ধৈর্য ধরুন। এরকম ছোট ছোট অপ্রাপ্তির জায়গাগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে তাকে বুঝিয়ে বলুন। এমনও তো হতে পারে আপনার অনেক বিষয় তার পছন্দ নয়। সুতরাং কিছু কিছু ব্যাপারে বদলাতে হবে দুজনকেই।

পরস্পরকে বুঝতে চেষ্টা করুনঃ

অনেক বোঝাপড়া শেষেই হয়তো বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আপনারা। কিন্তু তবুও এ কথা বলার কারণ হলো, মানুষ প্রতিনিয়তই বদলায়। সুতরাং বিয়ের পর কাছের মানুষটির কোন ধরনের পরিবর্তন দেখে ঘাবড়ে যাবার বদলে তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। কথা বলুন তার সাথে।

পরস্পরকে কিছুটা জায়গা দিনঃ

সঙ্গীর সব বিষয়ে নাক গলাবেন না। তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, ফেসবুক বা মোবাইল তার অজান্তে ঘাঁটবেন না। আগ্রহ হলে তাকে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে করুন। আশা করি তিনি না করবেন না। কিন্তু তাকে না জানিয়ে কাজটি করা হলে একদিকে যেমন তিনি জানতে পারলে কষ্ট পাবেন ও আপনার প্রতি অবিশ্বাস তৈরী হবে, অন্যদিকে তার এক ধরনের বক্তব্য আপনার কাছে অন্যভাবে ভুল অর্থ নির্মাণ করতে পারে। আর এ নিয়েই অযথা সংসারে অশান্তি শুরু হতে পারে। সন্দেহ করবেন না। আগ্রহ বা ভুল বোঝাবুঝি হলে সঙ্গীর সাথে সরাসরি কথা বলুন। তৃতীয় কোন ব্যক্তির সাথে বিষয়গুলো শেয়ার করবেন না।

রান্না করুন পরস্পরের জন্যঃ

নিশ্চয়ই মনে আছে আপনার স্বামী/ স্ত্রীটি কি খেতে ভালোবাসেন? এক কাজ করুন না, একদিন তার পছন্দের খাবারটি রান্না করে চমকে দিন না তাকে! রান্না করা খুব কঠিন কাজ নয়, বাজারে হাজারো রকম রান্নার বই তো আছেই! কোন একটা কিনে নিন।

কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিনঃ

ঘরের কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিন। যদি দুজনের মাঝে একজন কর্মজীবী হন তাহলে স্ত্রীকে মাঝে মাঝে সহযোগিতা করুন ঘরের কাজগুলোয়। কর্মজীবী যদি দুজনই হোন তবে অবশ্যই এটা করুন। এতে আপনাদের সময় বাঁচবে ও সেই বাড়তি সময়টুকু কাটাতে পারবেন দুজন মিলে বেশ খানিকটা ভালো মুহূর্ত!

ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানঃ

‘বাহ! তোমাকে তো ভীষণ সুন্দর লাগছে!’ ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই কথাগুলো বিয়ের পরে যেন জীবন থেকেই হারিয়ে গেছে! আপনার বেলায়ও কী তাই? বিয়ের পরে অনেককেই আফসোস করতে শোনা যায়, আগের দিনগুলোই ভাল ছিল বলে। কিন্তু সেই দিনগুলো স্মৃতির ফ্রেম থেকে আপনারাই নিয়ে আসতে পারেন বাস্তবে। প্রতিদিন নিয়ম করে হলেও দুজন দুজনকে সেই কথাগুলো যা এক সময় প্রতিদিন দেখা হলেই আপনাদের মাঝে বিনিময় হত। এতে কুন্ঠার কিছু নেই। বরং আজ থেকেই একবার বলেই দেখুন না, আপনার কাছের মানুষটি কত্তো খুশী হয়!

পরস্পরের পরিবারকেও আপন ভাবুনঃ

পরস্পরের পরিবারকে আপন ভাবুন। প্রেমের বিয়ের েেত্র পারিবারিক নানা সমস্যা হতেই পারে কিন্তু কোন পরিবারের প্রতি রাগ পুষে না রেখে চেষ্টা করুন মানিয়ে চলার এবং কোন প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সঙ্গীকে জানান ও দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে এর মোকাবেলা করা যায়।

শ্রদ্ধাশীল হোনঃ

পরস্পরের চিন্তা, চেতনা, মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। নিজের মতামত সব সময় চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। তিনি ভুল কিছু বলে থাকলে তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝান।

দূর্বল জায়গায় আঘাত করবেন নাঃ

যেহেতু আপনারা আগে থেকেই পরস্পরকে চেনেন ও জানেন, তাই পরস্পরের অনেক দুর্বল জায়গা সম্পর্কেও আপনারা অবহিত। কখনই সেই দূর্বল জায়গাগুলোয় আঘাত করবেন না এবং এ নিয়ে খোঁটা দেবেন না। এতে আপনাদের মাঝে অযথাই দূরত্ব তৈরী হবে।

অতীতের বিষয় ঝগড়ায় টেনে আনবেন নাঃ

সংসারে একসাথে থাকতে গেলে খুটখাট ঝগড়া আর অভিমান হতেই পারে। এটা সম্পর্ককে মজবুত করে। কিন্তু ঝগড়া বাধলেই অনেকে অতীতের মিটে যাওয়া কোন ঝগড়ার বিষয়বস্তু টেনে নিয়ে আসেন। এটা কিছুতেই করবেন না। এতে শুধু পরস্পরকে আঘাতই করা হয়, ফলপ্রসূ কোন সিদ্ধান্তে আসা যায় না। ঝগড়া করুন কিন্তু খেয়াল রাখবেন যতটা সম্ভব যুক্তি দিয়ে।

একসাথে সিদ্ধান্ত নিন ও পরিকল্পনা করুনঃ

নতুন সংসারের যেকোন সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনায় সঙ্গীর মতামত নিন।

নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলুনঃ

বিয়ের পর অনেকেই নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। এটা ঠিক নয়, এতে আপনার সঙ্গী হয়ত তার প্রত্যাশার বিপরীত চিত্র দেখে কষ্ট পেতে পারেন। পরস্পরই পরস্পরের জন্য নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন, বেছে নিন নতুন কোন হেয়ারস্টাইল বা যেতে পারেন জিমেও। দেখবেন সময়, বয়েস আর ভালোবাসা সবই অদ্ভুত সতেজতায় থেমে আছে আপনাদের চার দেয়ালের ছোট্ট সংসারের ফুলদানীটায়।

দৈনন্দিনটায় আনুন নতুনত্বঃ

প্রতিদিনের একঘেয়ে কাজগুলোয় নিয়ে আসুন নতুনত্ব।প্রতিদিন নিজেদের বেড রুমে সাজিয়ে রাখুন কিছু তাজা ফুল, খাবার পরিবেশনের সময় একটু সাজিয়ে দিন অথবা কোন একদিন রাতে খাবার সময় টেবিলে জ্বেলে নিন কিছু মোমবাতি, হয়ে গেলো ঘরেই ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।

ক্যাম্পাসে বা অফিসে হয়তো আপনারা ছিলেন ঈর্ষনীয় একটা জুটি। আর সেই ভালোবাসার সফলতার মাইলফলক আপনাদের বিয়ে।ভালোবাসায় নতুন মাত্রা যোগ করুন, একে পুরোনো হতে দেবেন না কিছুতেই! দেখবেন, আজ থেকে ১০ বছর পরেও চিরসবুজ তারুন্যময় ভালোবাসাঢ় বসন্তের মাঝেই রয়ে গেছে আপনাদের বিচরণ…।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫