বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, ‘প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা নেই। ফলে, বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছেন অর্থনীতিতে অবদান রাখা এ মানুষেরা।’ প্রবাসী বাংলাদেশি, ব্যাংকার, আইনজীবী, সমাজকর্মী, বায়রা প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও এনজিও প্রতিনিধিরা এ তাগিদ দেন।
সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, ‘প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি প্রবাসে থেকে দেশের জন্য অনেক অবদান রাখছেন কিন্তু আমরা তাদের কী দিতে পেরেছি? বিমানবন্দর থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের এখনো হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকী কষ্টে অর্জিত টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।’
সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সবুর খান, বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার।
সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ‘মন্দা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও বিগত অর্থ বছরে এক হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার প্রবাসীদের উপার্জিত আয় দেশে এসেছে যার ফলে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬শ’ কোটি ডলারে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরও বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ নেই।’
তিনি বলেন, ‘তবে এ সব রেমিট্যান্স উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামে বিনিয়োগ করতে হবে। তারা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারী প্রকল্পে এ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়া এভিয়েশন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।’
এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাবনার সুযোগ কাজে লাগাতে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা থাকতে হবে।’
মজীনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য এসব খাতে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করতে হবে বাংলাদেশিদের। একই সঙ্গে এসব খাতে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের কাজে লাগাতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসীদের হয়রানি কিছুটা কমেছে। তবে তা পুরোপুরি দূর করতে হবে। তারা দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছেন, এটা মানতে হবে। তবে তাদের উপার্জিত অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই তাদের শ্রম সার্থক হবে।’
সাবেক সচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসীরা তাদের অর্থ পিপিপি-এর অধীনে দেশের বড় অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসীদের অর্থ ব্যাংকগুলো মিলে যৌথ বিনিয়োগে যেতে পারে। এতে করে তাদের অর্থ নিরাপদে বিনিয়োগ সম্ভব হবে।’
প্রকৌশলী শাহজাহান বলেন, ‘প্রবাসীরা জাতীয় পরিচয় পাচ্ছেন না। তাদের বিদেশের মিশনগুলোর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
এ সময় তিনি প্রবাসীদের সন্তানরা যাতে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়, তার জন্য কোটা সংরক্ষণের কথা বলেন।
এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, ‘বৈধপথে প্রবাসী আয় আনতে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এটি জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এ সময় এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ(ইএবি)-এর পক্ষে শফিউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশে যেতে সাধারণ মানুষ বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। তাছাড়া অনেক জায়গায় বিশেষ করে সিলেটে আমাদের সরাসরি ফ্লাইট নেই। সেগুলো চালু করা দরকার। সিলেটে বিমানের জ্বালানি ভর্তির সুবিধা না থাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করা যাচ্ছে না।’
তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশি তারিক বিনও একই কথা বলেন।
প্রকৌশলী শাহজাহান খাদেম বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য বছরের একটি দিন প্রবাসী দিবস পালন করতে পারে সরকার। এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক প্রবাসী বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে হবে। এ জন্য সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে, যারা প্রবাসীদের স্বার্থ দেখবে।’
প্রবাসী রেজা খান বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন রাখা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত আছে। বাংলাদেশিরা যেখানে বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেখানে বাংলাদেশের সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।’
অ্যাডভোকেট ইউসূফ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে অনেক সময় প্রতারিত হচ্ছেন। এটা দুঃখজনক।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারম্যান এম এ সেকিল চৌধুরী। এ সময় কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এয়ারলাইন্স, বিদেশি মিশন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।