স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ শিক্ষকের হদিস নেই। এসব শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছে। তারা কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন তার কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব শিক্ষকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা কোটি টাকা। শিক্ষা বৃত্তির কথা বলে এসব শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা কাজে যোগ দেননি। তাদের নোটিশ দিলেও কোন কাজে আসেনি। নোটিশের জবাব দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও তাদের নাম দেয়া হয়েছে।
তারপরও তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ঠিকই বিদেশ গিয়েছেন। অনেকেই ডিগ্রি নিয়ে দেশেও ফিরেছেন। আবার অনেকে বিদেশেই থেকে গেছেন। অধিক টাকার লোভে এসব শিক্ষক বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মে জড়িয়ে গেছেন। এর জন্য তারা নিজেদের আগের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন না। কাজে যোগ না দেয়ায় কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করলেও অন্যরা এ বিষয়ে কর্ণপাতই করছেন না। কেননা তাদের সামনে রয়েছে অধিক টাকার হাতছানি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা শিক্ষাবৃত্তি ও ছুটি নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন। অনেক আগেই তাদের ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। এজন্য তাদের একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ঠিকানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। নিরুপায় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব শিক্ষকের নাম ও ঠিকানা ওয়েবসাইটেও দিয়েছিল। তারপরও কোন কাজ হয়নি। অননুমোদিত ছুটিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কাজে যোগ দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি। ঢাকা ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ জন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন সহ মোট ১৯১ জন শিক্ষকের হদিস মিলছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন মানবজমিনকে বলেন, এসব শিক্ষক ঠিকই ছুটি নিয়ে বিদেশ বা অন্য কোথাও গিয়েছিলেন।
ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও তারা কাজে যোগ দেননি। তিনি বলেন, আমরা এসব শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তাদের চিঠি দিয়েছি। অধ্যাপক হুসাইন আরও বলেন, বেশ কয়েকজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে। এরপরও অন্যরা কাজে যোগ দেননি। অধ্যাপক হুসাইন বলেন, এসব শিক্ষক নৈতিকতা হারিয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়েছেন। অনেকেই ঋণ নিয়েছেন। সেটাও পরিশোধ করেননি। আমরা তাদের বিষয়ে কঠোর। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিছু প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, অনেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে সেখানে হয়তো চাকরিতে যোগ দেন। এরপর আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। এমনকি ঋণের টাকাও ফেরত দেন না। এটা নৈতিকতা বিরোধী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এটা কাম্য নয়।