স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতিহাসের কিছু অজানা অধ্যায় ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। ২০শে ডিসেম্বর ১৯৬৯। শেখ মুজিবুর রহমান জানতে পেরেছিলেন তাঁকে হত্যার জন্য দু’জন আততায়ীকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে। মার্কিন নথির বরাতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের লেখা ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক গ্রন্থে। ‘ইতিহাসের পর্দা সরছে’ শীর্ষক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত মার্কিন নথিটি নিম্নরূপ; ২৯শে ডিসেম্বর ১৯৬৯, প্রেরক মার্কিন কনস্যুলেট ঢাকা। প্রাপক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসি। অনুলিপি আমেরিকান কনসাল; করাচি, লাহোর, পেশোয়ার। কনফিডেনশিয়াল ঢাকা। বিষয়: পূর্ব পাকিস্তান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যার চক্রান্ত।
১. ২৩শে ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ডেপুটি চিফ অব মিশন সিডনি সোবার এবং কনসাল ইনচার্জ সাাৎ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিব তার বিরুদ্ধে হত্যা ষড়যন্ত্রের তথ্য প্রকাশ করেন। মুজিব বলেন, ২০শে ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন, কিন্তু তখন গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু ২২শে ডিসেম্বর তিনি এ বিষয়ে যাচাইকৃত স্যা-প্রমাণ লাভ করেন। ফলে তাঁর মনে আর কোন সন্দেহ নেই যে, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে।
২. শেখ মুজিব বিশ্বাস করেন, ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যকার পাঞ্জাবিদের একটি ুদ্র চক্র রয়েছে। ওই পাঞ্জাবি সেনাচক্র পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের ধারণা মেনে নিতে পারছে না। দুই আততায়ীর মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে পৌঁছে গেছেন। মুজিবের সমর্থকরা অবশ্য তার প্রতিটি পদপে নজর রেখে চলেছেন। মুজিবকে যখন প্রশ্ন করা হয়, এ বিষয়ে সামরিক আইন প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে কিনা, তখন তিনি কিছুটা দ্বিধান্বিত হন। কিন্তু স্বীকার করেন যে, তাদের জানানো হয়েছে। (মন্তব্য: মুজিবের এই দ্বিধান্বিত হওয়াটার পেছনের কারণ হয়তো এটাই, এ বিষয়ে সামরিক আইন কর্তৃপকে অবহিত করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।)
৩. মুজিব মনে করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা যদি মনে করে থাকেন যে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রায় তাঁকে সরিয়ে দেয়াই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায়, তবে পাগল ছাড়া তারা আর কিছুই নয়। তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের উসকানিতে যদি তাঁকে হত্যা করা হয়, অখণ্ড পাকিস্তান রার শেষ সুযোগও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
৪. মন্তব্য: মুজিবকে হত্যার ষড়যন্ত্র সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, মনে করিয়ে দেয়ার পে এটা একটা সময়োপযোগী বিষয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কল্পনাতীত রকম শূন্যের কোঠায়। আসন্ন অবাধ রাজনৈতিক কার্যক্রমকালে বিশেষ করে শেখ মুজিব হাজার হাজার কিংবা কোন এক দিন লাখো লোক তাকে ঘিরে থাকবে। এরকম ভিড়ের মধ্যে একজন আততায়ী মুহূর্তের মধ্যে তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারবে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য তার ফল দাঁড়াতে পারে বিয়োগান্ত।