যানজট আর দুর্ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্যসব দিনের জ্যামের সঙ্গে ঈদ মৌসুমের জ্যাম একটু ভিন্ন। এ জ্যাম শুরু হয় রাজধানী ঢাকা থেকে, আর শেষ হয় মোটামুটি গন্তব্যে গিয়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর চৌরাস্তা পার হতেই চার ঘণ্টা লাগছে। চালকদের আশঙ্কা, কাল বুধবার থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

গতকাল সোমবার মহাখালী থেকে টঙ্গী-গাজীপুর হয়ে চলাচলকারী দেশের উত্তর ও দণি অঞ্চলের বেশ কয়েকজন যাত্রী ও চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী থেকে বেরোনোর সময় মহাখালী থেকে গাজীপুর কমপে ছয়টি স্থানে এবং ঢোকার আটটি স্থানে জ্যামে পড়তে হয়। কোথাও সড়কের দুরবস্থা, কোথাও চালকদের নিয়ম না মানা আবার কখনো কখনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা যানজটের অন্যতম কারণ বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক বাসচালক বলেন, টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর বানানী পর্যন্ত যেতেই এক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর পার হতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। এরপর টঙ্গী স্টেশন রোড় থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত যেতে লাগে আরও এক ঘণ্টা। সেখান জয়দেবপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে লাগে আরও এক থেকে দেড় ঘণ্টা। অর্থাৎ মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এক ঘণ্টার রাস্তায় লাগছে চার ঘণ্টা সময়।

বনানী কবরস্থান ও কাকলী ট্রাফিক সিগন্যালের কথা উল্লেখ করে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গরিবের গাড়ি আটকাইয়া এই দুই সিগন্যালে বড়লোকদের পার করে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়া থাকি।’

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার (দণি) খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর রাস্তায় যাতে কোনো গাড়ি থেমে না থাকে, সে জন্য কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ উপলে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশেষ টিম গঠন করে দায়িত্ব প্রদান ও ঢাকার চারটি ট্রাফিক বিভাগে ১২টি নিয়ন্ত্রণক স্থাপন করা হয়েছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা বগুড়া, পাবনা সিরাজগঞ্জ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও সিলেট এলাকার বাস চলাচল করে। এ পথের যাত্রী ও বাসচালকেরা জানান, টঙ্গীর স্টেশন রোড় থেকে চেরাগআলী, গাজীপুরা, জয়দেপুর চৌরাস্তা, জয়দেবপুর থেকে কোনাবাড়ি, সফিপুর, চান্দুরা, টাঙ্গাইল রুটের সাভারের জামগড়া, ফ্যান্টাসি কিংডম ও আশুলিয়া সড়কের বাইপাইল এবং সিলেট রুটে টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে মিরেরবাগ, নরসিংদীর পাঁচদোনায় তীব্র যানজট লেগে আছে।

এর কারণ কী—জানতে চাইলে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের এনা পরিবহনের চালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কারণ গাড়ি বেশি, রাস্তা চিকন। আবার দেখা যায়, আধা ঘণ্টা বসে আছি জ্যামে। জ্যামের জায়গা গিয়ে দেখি কিছুই না, একটা বাস রাস্তায় পাছা ঘুরিয়ে প্যাসেঞ্জার তুলছে। ব্যস এতেই কাম সারা।’

এর থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ঢাকা-বগুড়া গন্তব্যের একতা পরিবহনের চালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কেবল ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কাজ হবে না। যানজট থেকে বাঁচতে হলে চার লেনের রাস্তা লাগবে। তিনি বলেন, ‘আপনি হাই রোডে কোটি টাকার বাস চালাবেন। আবার রিকশা, ভ্যান, টেম্পো, ভটভটিও একই রাস্তায় তুলে দেবেন, জ্যাম তো হবেই। এই সোজা কথাটা বোঝার জন্য জ্ঞানী হওয়ার দরকার নাই।’

পুলিশসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টঙ্গী স্টেশন রোডের যানজটের অন্যতম কারণ সেনাকল্যাণ কমপ্লেক্সের পর থেকে রাস্তার বাম পাশে বেশ কিছু ট্রাক থামিয়ে রাখা, স্টেশন রোডে রাস্তার এক পাশে ফলের দোকান ও আরেক পাশে রাস্তাজুড়ে গাড়ি পার্কিং। এ ছাড়া ঢাকা-টঙ্গী গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলোর বেপরোয়া চলাচল ও স্টেশন রোডের যানবাহন বাইপাস করতে গিয়েও যানজটের তৈরি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘টঙ্গীর স্টেশন রোড মোড়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে একজন সার্জেন্ট, একজন হাবিলদার, ছয়জন কনস্টেবল দরকার। কিন্তু আছে মাত্র একজন সার্জেন্ট ও দুজন কনস্টেবল। ফলে একদিকে নজর দিলে অন্যদিকে যানজট লেগে যায়।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫