আইনি মারপ্যাঁচে তিপূরণ বঞ্চিত রানাপ্লাজার শ্রমিকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাভারের ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসে তিগ্রস্ত শ্রমিকরা আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে তিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। তিপূরণের নামে প্রহসন চলছে এ প্রতিষ্ঠানে।

সাভারের রানা প্লাজার পাঁচটি গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিক ছিল তিন হাজারেরও বেশি। এত বড় একটি ঘটনার পরও আহত শ্রমিকদের বিজিএমইএর থেকে তিপূরণ বলতে শুধু একমাসের বেতন ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয়নি। তবে যেসব শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ একবছর হয়েছে, তাদেরই কেবল ছুটি সংক্রান্ত পাওনাদি দেওয়া হয়েছে।

এই পাঁচ কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ ছয় মাসের বেশি হলেও এক বছরের কম ছিল। ফলে তাদের ভাগ্যে জুটেছে শুধু একমাসের বেতন। বিজিএমইএ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের আর কোনো পাওনাদি বকেয়া নেই। তাদের পাওনা কেবল এক মাসের বেতন।

এর কারণ হিসেবে বিজিএমইএ সভাপতি মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী সব পাওনাদি পরিশোধ করেছি। ২০ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কারখানা যদি নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে বন্ধ যায় তাহলে শ্রমিকদের কেবল ছাঁটাই বেনিফিট দেওয়া  হবে। এেেত্র টার্মিনেশন বেনিফিট দেওয়ার কোনো কারণ নেই। যেহেতু টার্মিনেশন বেনিফিটের কথাই আসছে না, সেহেতু চার মাসের বেতন দেওয়ারতো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রম আইনের ২৬ এর ১ ধারায় বলা আছে, যদি মালিকের অবেহেলা, অসচেতনতা বা ইচ্ছাকৃতভাবে কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তাহলে শ্রমিকদের টার্মিনেশন বেনিফিট ও ছাঁটাইয়ের দুই মাস আগে নোটিশ দিতে হবে।

রানা প্লাজার দুর্ঘটনাটি মালিকদের অবহেলার কারণেই হয়েছে। তাই ২০ ধারা অনুযায়ী একমাসের বেতন দেওয়া অন্যায় ও অযৌক্তিক। হাজারেরও বেশি শ্রমিক মারা গেছে এবং এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের শিল্পেেত্র সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। তারপরও তিগ্রস্তদের শুধু একমাসের বেতন দেওয়া অনৈতিকও বটে।

তাছাড়া রানা প্লাজা ধসে যেসব শ্রমিক আহত হয়েছেন, তারা বেশির ভাগই পরবর্তীতে আর কোনো ভারি কাজ করতে পারবেন না। তাদের ভবিষ্যতই এখন হুমকির মুখে।

এখনো রানা প্লাজার অনেক শ্রমিক একমাসের বেতনও পাননি বলে অভিযোগও অসংখ্য আছে বলে জানা যায় রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সূত্রে।

সংগঠনটির সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিনই রানা প্লাজার কোনো না কোনো শ্রমিক আসছেন। অভিযোগ, তারা তাদের পাওনাদি পাচ্ছেন না। আমরা চাই, এত বড় একটি দুর্ঘটনায় যারা তিগ্রস্ত হলো তাদের তিপূরণ যাতে সঠিকভাবে দেওয়া হয়। কারণ এসব সাধারণ শ্রমিকরা আইন বোঝেন না। তারা দু’বেলা খেতে পেলেই খুশি।’

তিনি আরও বলেন, এবিষয়ে আমরা বিজিএমইতে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের ইতিবাচক কথাই বলছেন। তারা বলেছেন, যারা অভিযোগ নিয়ে আসছেন তাদের বিজিএমইএতে পাঠিয়ে দেন পাওনাদি পরিশোধ করা হবে।

অন্যদিকে, ছাঁটাই বেনিফিট দিয়ে মালিকরা যখন টার্মিনেশন বেনিফিট থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছেন, তখন শ্রমিকরা যে আইনি লড়াইয়ে যাবেন তারও পথ যেন রুদ্ধ করে দিয়েছে বিজিএমইএ। কারণ এক মাসের বেতন দেওয়ার সময়ই বেশির ভাগ শ্রমিকের কাছ থেকে তাদের আইডি কার্ড নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে তারা যদি আইনের দারস্থ হতে চান তাও পারবেন না। কারণ তারা যে ওই কারখানার শ্রমিক, প্রমাণ হিসেবে আইডি কার্ডটিও আর তাদের কাছে নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫