স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটা টিকিটের জন্য সারারাত জেগে থাকতে প্রস্তুত সিদ্দিকুর রহমান। রাজধানীর রামপুরায় থাকেন তিনি। ইফতারের পরপরই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। রাতভর জেগে থেকে সকালে টিকিট নিয়েই ফিরবেন। এতো দীর্ঘ প্রতীায় কষ্ট হবে না, প্রশ্ন করতেই সিদ্দিকুর রহমান জানালেন, ‘আসলে এ কষ্টের মাঝে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। আমরা যারা দূরে যাই তাদের জন্য ঈদের আনন্দ দুই রকম। তারমধ্যে একটা হচ্ছে টিকিটের জন্য রাত জেগে আড্ডায় মেতে থাকা।’
তার কথার সত্যতা পাওয়া গেছে টিকিট নিতে আসা অন্যদের সঙ্গেও কথা বলে। প্রতীায় থাকা বেশিরভাগই বয়েসে তরুণ। তারা কমলাপুর রেল স্টেশনের কাউন্টারের সামনে অপো করছেন। সংবাদপত্র বিছিয়ে কেউ কেউ মেতেছেন কার্ড কিংবা লুডু খেলায়। কেউ আবার মত্ত গভীর গল্পে। ঘুমিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
ঈদের আগাম টিকিটের সময় ঘনিয়ে এলেই কমলাপুরের এ চিত্র চোখে পড়ে। কারও কারও জন্য এ বিষয়ে ভীষণ কষ্টদায়ক হলেও অনেকেই এ রাতজাগাকে আনন্দের মনে করছেন। এমন রাতের প্রতীায় তারা থাকেন বলেও উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই জানান।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে কথা হয় আশিকুর রহমান নামে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত এক টিকিট ক্রেতার সঙ্গে। তার হাতে থাকা কাগজে লেখা আছে ৪৫ জনের তালিকা। কথার ফাঁকেও কয়েকজন এসে এ তালিকায় নাম তুলে গেলেন। জানতে চাইলে আশিকুর সহজভাবেই বললেন, ‘এটা হচ্ছে টিকিটের সিরিয়াল। বিভিন্ন কাজে অনেকেই এদিক সেদিক যেতে পারেন। কিন্তু তাদের লাইনের সিরিয়াল যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য নিজ উদ্যোগে এ তালিকা করছি।’
আশিকুরের এ তালিকায় নাম উঠাতে অনেককেই আগ্রহের সঙ্গে আসতে দেখা গেছে। তাদের একজন জসিম উদ্দিন। রাজশাহীর মানুষ। হাসিমুখ নিয়ে বললেন, ‘এ তালিকা থাকায় অনেক ভালো হয়েছে। আমরা কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। সিরিয়াল নিয়ে আর ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
তারসঙ্গে কথা মেলালেন হানিফ নামে অন্য একজন। তিনি বললেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে টিকিটের জন্য রাত জাগি। প্রতিবছরই কোনো না কোনো ঝামেলা হয়। এ সিরিয়ালের কারণে আশা করছি, সে ঝামেলা হবে না।’
স্টেশনের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে টিকিটের জন্য অপেমানদের বেশ আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তারা এসেছেন টিকিট নিতে। নিলুফার পারভীন নামে একজন বাংলামেইলকে বলেন, ‘পরিবারে সদস্য বেশি হওয়ায় কয়েকজনকে আসতে হচ্ছে। তবে এখানে একরাত কাটানো মোটেও খারাপ লাগবে না। সবাই মিলে বেশ আনন্দেই কাটবে বলে মনে হচ্ছে।’
এদিকে কমলাপুরের সার্বিক নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপ। রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। র্যাব-৩ এর প থেকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পও বসানো হয়েছে স্টেশনে।
র্যাবের দায়িত্বে থাকা ল্যাফটেনেন্ট ওয়ালিদ বলেন, ‘আমরা সার্বণিক মনিটরিং করছি। আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরাও তৎপর আছে। কোনো ধরনের নাশকতা যাতে না ঘটে এবং কালোবাজারি যাতে হতে না পারে, সেজন্য সব ধরনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’
এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাঙ্তি ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
সারারাত প্রতীার পর সকাল ৯টা থেকে আগাম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হবে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ২৭ জুলাই পাওয়া যাবে ৫ আগস্টের আগাম টিকিট। এদিনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫৮ হাজার ১০০ টিকিট। এরমধ্যে ৪৬ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে আসন রয়েছে। বাকি ১১ হাজার ৬০০ টিকেট হবে স্ট্যান্ডিং।