রাজশাহী প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শনিবার। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন অবমুক্তকরণ করা হবে।
সকাল সোয়া ১০টায় ৬০ বছর পূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।
সকাল সাড়ে ১০টায় সিনেট ভবন চত্বরে বৃক্ষরোপণ, শোভাযাত্রা ও সকাল ১১টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মিলনায়তনে ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে টিএসসিসি’র উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।
১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরবঙ্গের এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানসম্মত শিক্ষা, আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা ও উদ্ভাবনার পাশাপাশি মুক্তবৃদ্ধির চর্চার ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
এক নজরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। একই বছর ৬ জুলাই ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় পদ্মাপাড়ের কুঠিবাড়ি ও রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৬১ সালে কুঠিবাড়ি থেকে নয়নাভিরাম মতিহারের এ সবুজ চত্বর আসে। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে রাজশাহী শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ এ ক্যাম্পাসটি। ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমিতে স্থাপিত হয় এর ক্যাম্পাস।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার নাম স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে।
শুরুতে দর্শন, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, গণিত ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। পরে স্নাতক বিষয়ে ডিগ্রি খোলা হয়। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের আওতায় ৪৭টি বিভাগে মোট ৪৯টি বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ৫টি ইনস্টিটিউট। ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টি (একটি নির্মাণাধীন) আবাসিক হল রয়েছে।
এছাড়া গবেষকদের জন্য একটি ডরমিটরি রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক প্রায় এক হাজার ৩০০, অফিসার ৭৬৮, সহায়ক কর্মচারী ৮৮৩, সাধারণ কর্মচারী এক হাজার ৫৬৪ কর্মরত রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। ক্যাম্পাসটির রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতল বিশিষ্ট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রন্থাগার। এছাড়া নয়নাভিরাম তুর্কি স্থাপত্যের নিদর্শনরূপে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ।