সিলেট: সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে রোববার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী টিলাগড় এলাকা। ছাত্রলীগের আজাদ-রণজিত গ্রুপ এবং শফিকুর রহমান এমপি সমর্থিত পঙ্কজ গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
রোববার ১২টা ১০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আজাদ রণজিৎ গ্রুপের কর্মীরা সময় টিভির রিপোর্টার আব্দুল আহাদ ও ক্যামেরা পারসন নওশাদ আহমদকে বেধড়ক মারধর করে ক্যামেরা কেড়ে নেন। কিছু সময় পর ক্যামেরা উদ্ধার করা হলেও তখন ক্যামেরাটি ভাংচুর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে এমপি সমর্থিত জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কার হওয়া সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্তের গ্রুপ ক্যাম্পাসের দখল নেয়। এ সময় স্থানীয় টিলাগড় পয়েন্টে অবস্থান নেয় আজাদ-রণজিত গ্রুপ।
বেলা ১২টার দিকে আজাদ-রণজিত গ্রুপ দেবাংশু দাস মিঠু ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ‘ধর ধর’ চিৎকার দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে দৌঁড়ে যায়। এ সময় ক্যাম্পাসের দখল নেওয়া এমপি গ্রুপ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। একই সঙ্গে আজাদ-রণজিত গ্রুপ তাদের ধাওয়া করে পাল্টা গুলি চালায়।
এরপর এমপি গ্রুপ টিকতে না পেরে পিছু হটে রাজপাড়া এলাকার দিকে চলে যায়। তারা এ এলাকা থেকে ১৫ রাউণ্ড গুলি ছোঁড়ে। উভয় পক্ষে আধা ঘন্টায় অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।
এরপর গোলাগুলি কিছুটা থেমে গেলে আজাদ-রণজিত গ্রুপ ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। ওই সময় ক্যাম্পারে মূল ফটকের সামনে দাঁড়ানো সময় টিভির ক্যামেরা পারসন নওশাদ আহমেদের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেন গ্রুপটির সদস্যরা। সঙ্গে থাকা সময় টিভির রিপোর্টার আব্দুল আহাদকেও মারধর করে তারা।
ওই স্থানে উপস্থিত আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীও লাঞ্ছিত হন তাদের হাতে। পরে ক্যামেরাটি ভাঙা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ব্যাটারি পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনার সময় শাহপরাণ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলো নীরব দর্শকের মতো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহপরাণ থানা পুলিশের ওসি সাংবাদিকদের জানান, “পুলিশের পক্ষে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না।”
সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
পঙ্কজ গ্রুপ তাদের ৫ নেতাকর্মী গুলি ও আজাদ-রণজিৎ গ্রুপের হামলায় আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে।
আজাদ-রণজিৎ গ্রপের এক নেতা জানান, তাদের হাসান নামে এক কর্মীকে সকালে মারধর করায় মূলত এমপি গ্রুপকে ক্যাম্পাস থেকে হঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সংঘর্ষ শুরুর মুহূর্তেই কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসা থেকে ৫টি শর্টগানের গুলি বের করে নিয়ে এসে ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়ায়। আর শুরু থেকেই এমপি সমর্থিত পঙ্কজ গ্রুপ সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলো।
বিকেল সাড়ে ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনার উত্তেজনা থামেনি। উভয়পক্ষ নিজের শক্তি বৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি করছে বলে জানা গেছে।
সাংবাদিকদের অবস্থান অবরোধ
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এমসি কলেজ মূল ফটকের সামনে বেলা ২টা থেকে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও অবস্থান করেন সিলেটের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।