শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > খেলা > ৮৬র পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?

৮৬র পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ প্রতিদিনই জবাব খুঁজি। কিন্তু পাই না। বিশ্বকাপের পাঁচটি আসর থেকে ফিরেও পাইনি। কেন বাংলাদেশের অগণিত ফুটবল ভক্ত আর্জেন্টিনাকে ভালবাসেন। যে দলটি ২৪ বছর ধরে কোন বিশ্বকাপের আসরে সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। সেই যে ৮৬ বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল। এরপর দলটির ওপর অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। দিয়াগো ম্যারাডোনা হিরো থেকে বিতর্কিত হয়েছেন দেশে-বিদেশে। তারপরও কেন এই ভালবাসা। কথা বলেছি অনেক ফুটবল সমর্থকের সঙ্গে। ফুটবল সংগঠকদের সঙ্গেও কথা বলেছি। নিশ্চিত কোন জবাব নেই। অনেকেই বলছেন এর পেছনে বিশ্ব ফুটবলের জাদুকর দিয়াগো ম্যারাডোনা।

তাকে মানুষ এতটাই ভালবাসে যার জন্য আর্জেন্টিনা ফাইনালে গেল কি গেল না তা নিয়ে একবারও ভাবে না। তাছাড়া দেশটি রাজনৈতিক কারণে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। তবে মিল নেই তেমন। যিনি ম্যারাডোনাকে ভালবাসেন তিনি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের সমর্থক। রাজনৈতিক কোন কারণ এখানে আছে বলে মনে হয় না। এক ধরনের আবেগ কাজ করে। ব্রাজিলের সমর্থকদের মধ্যেও আওয়ামী লীগ-বিএনপি ভাগাভাগি আছে-এমনটা ভাববার কারণ নেই। তাহলে বেশির ভাগ মানুষ কেন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে মাতামাতি করেন। সব প্রশ্নের জবাব এক সঙ্গে করলে এটাই দাঁড়ায় দিয়াগো ম্যারাডোনা।
তার প্রতি মানুষের ভালবাসা এতটাই-আদালতে মামলা করতেও কসুর করেন না। ’৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে যখন মাদক সেবনের অভিযোগে মাঠ থেকে বহিষ্কার করা হয় তখন ময়মনসিংহের একটি আদালতে মামলা হয়েছিল। মামলায় ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যাভেল্যাঞ্জকে প্রধান আসামি করা হয়। সমন পাঠানো হয় ফিফা বসের কাছে। এক মাসের সময় দেয়া হয়। দেখুন কতটা পাগলামি। বুয়েনস আয়ার্সের কোন আদালতেও এ রকম মামলা হওয়ার খবর জানা যায় না। খবরটি বিশ্বসংবাদ হয়ে যায় মুহূর্তেই ওয়্যার সার্ভিসের কারণে।
বোস্টনে বসে রিপোর্ট লিখছি একজন মেক্সিকান সাংবাদিক খুঁজছেন একজন বাংলাদেশী সাংবাদিককে। মিডিয়াকর্মী পিটার তাকে নিয়ে এলেন আমার কাছে। প্রথমে বুঝতেই পারিনি। আমাকে কেন খুঁজছেন। পিটারের জবাব এই মাত্র খবর এলো ম্যারাডোনাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে তোমাদের দেশের একটি আদালত ফিফা বসকে সমন জারি করেছে। এটা কেন? পাশে বসা লেবানিজ সাংবাদিক হারিস। সে-ও কৌতূহলী হয়ে উঠল। বললাম বিস্তারিত জানি না। তবে অনুমান করতে পারি নিছক ভালবাসা থেকে। ভালবাসা এতটাই। অবশ্যই, আর্জেন্টিনার খেলা যখন হয় তখন বাংলাদেশ স্তব্ধ হয়ে যায়। রাস্তাঘাটও ফাঁকা হয়ে যায়। শনিবার ঢাকার রাস্তাও ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। পিটার বললো, এক কথায় কি বলবে? একজন সুপারস্টারের জন্য অকৃত্রিম ভালবাসা।
সেটা কি সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সবই সম্ভব। সে খুব খুশি হলো না। তবে এর কিছু দিন পর লস এঞ্জেলেস-এর পাসাদোনা স্টেডিয়ামে যখন ফাইনাল কভার করতে গিয়েছি সেখানে ভিডিও ক্লিপ আমাকে দেখিয়েছিল। বলেছিল এটা তার টিভিতে প্রচার হয়েছিল। সত্যিই ম্যারাডোনার প্রতি বাংলাদেশীদের ভালবাসা ঈর্ষণীয়। ২৪ বছরে কত তারকা এলেন আবার হারিয়েও গেলেন, কিন্তু ম্যারাডোনা আছেন থাকবেন। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও ম্যারাডোনাকে নিয়ে মাতামাতি করে। অনেকে বলেন পেলের কথা।
আসলে পেলের কোন ক্রেজ বাংলাদেশে নেই। ব্রাজিলের অগণিত ভক্ত আছেন দলমত নির্বিশেষে। শুনেছি আমাদের তিন নেত্রী সাম্বার খুব ভক্ত। নেইমার বিশ্বকাপ থেকে আউট হয়ে গেছেন এই খবরে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কারণ তারা মনে করেন নেইমার ছাড়া ব্রাজিলের পক্ষে আরও কিছু পথ পাড়ি দেয়া হয়তো কঠিন হবে। অনেকে ৮৬ বিশ্বকাপের চিত্র দেখছেন। বললেন, স্পেন থেকে ব্রাজিল। ম্যাজিক দেখিয়ে ট্রফিটা ম্যারাডোনা বুয়েনস আয়ার্সে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে। এবার কে? মেসির পক্ষেই তা সম্ভব। ম্যারাডোনা-মেসি মিল খুঁজবো না। কারণ দু’জন দুই ভুবনের তারকা। দেশটি হতে পারে আর্জেন্টিনা। প্র্যাকটিস ম্যাচে নাকি ইনিয়েস্তা আর পিকের কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন কাপটা ধরতে কেমন লেগেছিল।
আর্জেন্টাইন মিডিয়া এ খবর দিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ থেকে আমরা কি বুঝলাম। লিওনেল মেসি মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন-কাপটা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। অসম্ভব কি? মেসির পক্ষেই তা সম্ভব। আর সেটা যদি হয় স্বপ্নের ফাইনাল। আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল। একদিকে নেইমার নেই। অন্যদিকে নেই থিয়াগো সিলভা। সেমিফাইনালে জার্মানির সঙ্গে লড়াই। জার্মানি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এবার তারাও এসেছে কাপ নিতে। আজ যিনি হিরো কাল তিনি ভিলেন। নিছক পোস্টার বয়। আর্জেন্টিনা-জার্মানি ফাইনাল। টান টান উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে। মেক্সিকোর আজটেকা স্টেডিয়ামে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০২ জন দর্শকের সামনে ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্ন- ম্যারাডোনার গতি রোধ করবে কে? জার্মানির লোথার ম্যাথিউস কি দেয়াল রচনা করতে পারবেন। ম্যাথিউস সেরা ফুটবলার।
মাঝমাঠ রক্ষা করা তার কাজ। ম্যারাডোনাকে আটকাতে হলে বল বারবার তাকে ফাঁকি দিয়ে ডি বক্সের কাছে চলে যাবে। সুযোগ বুঝে ম্যারাডোনা কাজটি সেরে ফেলে দেবেন। আসলেও তাই। ম্যারাডোনা-ম্যারাডোনাই। একাই এগারো। খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ছ’মিনিট বাকি। তার একটি পাস খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। জার্মান ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে বল ঠেলে দেন বুরুচাগার কাছে। বুরুচাগা সময় নেননি। সোজা কিক করলেন পোস্টে। বল চলে গেল জালে। এরপর কি? খেলা ২-২ গোলে ড্র। জার্মানরা মরিয়া। ম্যারাডোনার অবস্থা কি? যে করেই হোক কাপ জিততেই হবে। কিন্তু কিভাবে। তার আত্মজীবনীতেই লিখেছেন সময় নেয়া যাবে না। বিপদ হয়ে যেতে পারে। মাঝ মাঠ থেকে একটি বল লুফে নিয়ে আবারও বুরুচাগাকে ঠেললেন।
জার্মান ডিফেন্স তখন অনেকটা কাবু। বুরুচাগা শট নিলেন গোলে। গ্যালারিও তখন খেলছে। নিমেষেই বল জালে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খেলার ভাগ্য তখন নির্ধারিত হয়ে গেছে। ৩-২ গোলে নিষ্পত্তি। ম্যারাডোনার হাতে ট্রফি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ম্যারাডোনাই সম্ভবত একজন প্লেয়ার যার একক চেষ্টায় আর্জেন্টিনা পেয়েছিল এই সোনার কাপ। এবারও সে সুযোগ মেসির সামনে। নাইজেরিয়ার সঙ্গে খেলাটি ড্র হতে যাচ্ছিল। ড্র হলে টাইব্রেকারে গড়াতো। এটা ভাগ্যের খেলা। যে কেউ জিতে যেতে পারে। খেলার বাকি ২ মিনিট। একটি ফাইনাল পাস দিলেন মেসি। ডি মারিয়াকে কোন কষ্টই করতে হলো না। দিনের নায়ক মারিয়া।
মেসি ভিলেন নয়। তাকে স্মরণ করলো ফুটবল বিশ্ব। একজন জাদুকর হিসেবে। এরকম ঘটনা যদি ব্রাজিল বিশ্বকাপে ঘটে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দেখা যাক না কি অপেক্ষা করছে মেসির জন্য। ৮৬’র পুনরাবৃত্তি ঘটে কিনা? আমি কিন্তু অবাক হবো না। যদিও বিশ্বকাপের অনেক কিছু ভাল, অনেক কিছু খারাপ। কিছু কুৎসিতও রয়েছে। কুৎসিতটা কি? এই ধরুন ভারতীয়রা এক মাসে ব্রাজিলে ৬ কোটি কনডম বিক্রি করেছে। এটাকে কুৎসিত বলবেন কি করে। কনডম তো জীবনেরই অংশ। ব্রাজিলে অবাধ যৌনতা। সরকারি বা বেসরকারি কোন ফতোয়া নেই এসব বন্ধের। ভারতীয় কোম্পানি এইচএলএফ লাইফ কেয়ার প্রতি মাসে ২০০ কোটি কনডম প্রস্তুত করতে সক্ষম। মনে রাখতে হবে বিশ্বে কনডম ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে জাপান শীর্ষে। এসব বাদ দিলে বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই। (মানবজমিন)