শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ৭ মার্চের ভাষণেই স্পষ্ট ছিলো স্বাধীনতার ঘোষণা

৭ মার্চের ভাষণেই স্পষ্ট ছিলো স্বাধীনতার ঘোষণা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ঢাকা : মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ, তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনতার উত্তাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।

তার এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন। চূড়ান্ত এক মুক্তির যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে। এটি ছিল সুকৌশলে দেয়া এক সুচিন্তিত দিক নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ভাষণটি আসলে ছিল স্বাধীনতারই ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ারই এক আগাম নির্দেশ—‘‘আমি যদি হুকুম দিবার না-ও পারি…’’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। … ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। প্রস্তুত থাক। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।”

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণার বলতে গেলে শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিকতার বাকি থাকে। তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।

১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসন শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা বাঙালির এই স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামরত মুক্তিকামী বাঙালি সংগ্রামের চূড়ান্ত একটি পর্যায়ে এসে উপনীত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই চূড়ান্ত পর্বে বহুযুগের আগলভাঙা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন বঙ্গবন্ধু।

৭ মার্চের এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ-পীড়ন থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জনের সুর্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
তার এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামতে। সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেই দেশের প্রতিটি মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার নির্দেশনার মধ্যেই সেটা স্পষ্ট হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশ ও দিক নির্দেশনাকে অনুসরণ করে বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলনের চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও নিতে থাকে। ২৫ মার্চের কালো রাতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই রাতেই গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। বাঙালি জাতি ৯ মাসের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। ছিনিয়ে আনে এক অভূতপূর্ব বিজয়।