শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > ৫০ হাজার পাইলটের কাজ করে ৩০০

৫০ হাজার পাইলটের কাজ করে ৩০০

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ আট হাজার নৌপথ পরিচালনার জন্য ৫০ হাজার পাইলটের কাজ চলছে মাত্র ৩’শ জনকে দিয়ে। ফলে নৌদুর্ঘটনা বাড়ছে। গত এক বছরে (২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ) ৪০টি কার্গোজাহাজ এবং ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের ট্রলার দুর্ঘটনায় পড়েছে। এতে যেমন প্রাণহানি ঘটেছে তেমনি কোটি টাকার সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে নৌযানগুলো পাইলটবিহীন অবস্থায় চলাচল করায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

নদী সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৌদুর্ঘটনা, নৌডাকাতি বন্ধ ও রাজস্ব বাড়ানো এবং সারাদেশে ৫৫ হাজার নৌযান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চালাতে হলে প্রায় ৫০ হাজার পাইলট নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। ৫০ হাজার পাইলট নিয়োগ দেয়া হলে সরকারের কোনো আর্থিক ক্ষতি নেই। বরং বছরে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের পথও সৃষ্টি হবে।

বিআইডব্লিউটিএ নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গভীর চ্যানেল চিনিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিটি নৌযানে বিআইডব্লিউটিএর পাইলট নিতে হয়। পাইলট যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন, নৌযানের মাস্টার-চালকরা সেভাবে নৌযান চালাবেন। একজন পাইলটের জন্য প্রতি মাসে ব্যয় হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর পাইলট সেবার জন্য যে বিল পরিশোধ করা হয় তার পরিমানও খুব কম, প্রতি বিট ফি (প্রতি ৮ ঘণ্টা পরপর একটি বিট) মাত্র ৩০০ টাকা।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে এই বিট ফি ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই ফি কমপক্ষে এক হাজার টাকা হওয়া উচিৎ বলে পাইলট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজকে পাইলটিং করার জন্য কমপক্ষে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা বিল দিতে হয়।

বিট ফি এক হাজার টাকা হলে এবং একজন পাইলট দিনে দু’টি বিট পরিচালনা করলে আয় হবে দুই হাজার টাকা। পাইলটরা এই বিট ফি আদায়ের পর সরকারি কোষাগারে জমা দেন। কোনো পাইলট মাসে গড়ে ২০ দিন ডিউটি করলে বিট ফি হিসেবে মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় হবে। আর এর জন্য একজন পাইলটের বেতন বাবদ মাসে ব্যয় হবে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। ফলে মাসে ২৫ হাজার টাকা বেশি রাজস্ব আয় হতে পারে। যদি ৫০ হাজার পাইলট নিয়োগ করা হয়, তাহলে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হবে (২৫ গুন ৫০) ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

নৌ-বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ৫০ হাজার পাইলট নিয়োগ করা হলে স্টেশন সংখ্যাও বাড়বে। তখন নতুন স্টেশনগুলোতেও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রেও কর্মসংস্থানের একটা বড় পথ তৈরি হবে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. এমদাদুল হক বাদশা বলেন, ‘পাইলটসহ প্রতিটি নৌযান চলাচল করানো হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকখানি কমে যাবে। মালামাল পরিবহন এবং যাত্রী সেবার মান অনেকাংশে বাড়বে। তাছাড়া নৌপথে জলদস্যুদের উপদ্রব এবং মার্কাবাতি, বয়া চুরি ও নষ্ট হওয়াও কমবে। ফলে একদিকে যেমন অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় এবং নৌ-চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাও বাড়বে। তবে এ জন্য যেসব নৌরুটে পাইলট নেয়া বাধ্যতামূলক নয়, সেসব নৌরুটে পাইলট নেয়া বাধ্যতামূলক করার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইলটের সংখ্যা বাড়ানো হলে সরকারের কোনো আর্থিক ক্ষতি তো হবেই না, বরং রাজস্ব আয় অনেক বাড়বে এবং অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হবে। শুধু তাই নয়, নৌযান নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং দুর্ঘটনাও অনেকখানি কমবে।’

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য মতে, নৌপথে ব্যাপক ড্রেজিং ও নৌপথ বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগের কারণে নৌপথের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এই নৌপথের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ বিশাল নৌপথ মার্কিং ও সংরক্ষণ কাজের জন্য ১৯৮৩ সালে মাত্র ২৩৭টি মার্কম্যানের অনুমোদিত পদের বিপরীতে বর্তমানে মাত্র ১০৭ মার্কম্যান কর্মরত আছেন।

প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথে দিনে-রাতে নৌ চলাচল অব্যাহত রাখার জন্য মার্কম্যানের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫শ’ করা প্রয়োজন। এরা নৌপথ মার্কিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনে নৌযান পাইলটিংও করতে পারবে। তাদের এই কাজের কারণে সরকারের যে রাজস্ব আয় হবে তা দিয়েই তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. এমদাদুল হক বাদশা। বাংলামেইল২৪ডটকম