স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে।
এ সময়ের মধ্যে তিনি তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র অনুসন্ধান টিমের কাছে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
জ্ঞাত আয় বহির্ভুত কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ তাকে প্রায় দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
রাজনীতি করে কিভাবে কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন—দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার এমন প্রশ্নের মুখে এ বিএনপি নেতা জানিয়েছেন বৈধভাবেই তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন।
সূত্রটি জানায়, শাহজাহান ওমর ও তার পারিবারের সদস্যের নামে সাভারে ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের সাঙ্গো টেক্সটাইলসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কয়েকটি ব্যবসায়িক ফ্ল্যাট রয়েছে। এরমধ্যে বারিধারার পার্ক এভিনিউতে সাড়ে ৭ কাঠা জমির ওপর ৩ তলা একটি ভবনের অস্তিত্ব পেয়েছে দুদক। এসব সম্পদের বেশিরভাগ তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাঙ্গো টেক্সটাইলের মালিকানা সম্পর্কে দুদককে জানান, এ টেক্সটাইলে তার ১৫টি শেয়ার রয়েছে। যা তার ভাই, বোন, স্ত্রীসহ নিকট আত্মীয়র নামে। আর বারিধারার পার্ক এভিনিউ’র ৩ তলা ভবনটিতে তিনি বসবাস করছেন।
দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে আমরা তাকে তলব করেছি। সম্পদ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কাগজ পত্র চাওয়া হয়েছে। কিছু কাগজপত্র দিয়েছেন। আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সময় চেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দুদকের চাহিদা মোতাবেক কাগজপত্র জমা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দুদক জানায়, শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে কয়েক’শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির কাছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শাহজাহান ওমর, তার স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানা এবং ছেলে আদনান ওমরের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দেয়ার অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ মেসবাহ উদ্দিন বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় ওই মামলাটি করেন।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, অভিযুক্তরা দুদকে সম্পদের যে হিসাব জমা দেন সেখানে তারা ৪৬ লাখ ১৮ হাজার ৫০২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছে। দুদকের অনুসন্ধানে তার মুলত ২ কোটি ৬ লাখ ১৫ হাজার ৮০৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের খোঁজ পায়। ওই সময় শাজাহান ওমরের বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ডে অভিজাত বাড়ি ‘বীরউত্তম ভবন’ ব্যাপক আলোচনায় আসে।
এরপর ২০০৮ সালের মে মাসে শাহজাহান ওমরকে ১৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক। আর দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অপরাধে তার স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানাকে তিন বছর কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো ছয় মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শাহজাহান ওমরের ছেলে আদনান ওমরকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়।
পরে তিনি এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আদালত ওই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, ওয়ান ইলেভেনে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাকে ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন এ বিএনপি নেতা।