বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ৪৫ কিলোমিটার উড়াল মহাসড়ক নিয়ে ২ বিভাগের টানাপড়েন!

৪৫ কিলোমিটার উড়াল মহাসড়ক নিয়ে ২ বিভাগের টানাপড়েন!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা বাইপাসের ওপর ৪৫ কিলোমিটার ফোর লেন উড়াল মহাসড়ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উড়াল সড়কের পাশে আলাদা একটি টোলমুক্ত লেনও থাকবে। যাতে করে সাধারণ পথচারীরা বিনা পয়সায় যাতায়াত করতে পারেন। ঢাকা বাইপাস সড়কটি বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।

তবে এ সিদ্ধান্ত সরকারের কোন বিভাগ বাস্তবায়ন করবে সেটাই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই নিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু বিভাগের মধ্যে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। কোন বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এই নিয়ে চলছে পরষ্পরের বিপরীতধর্মী বক্তব্য।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, মহাসড়কের ভূমির সব কাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। উড়াল সড়ক অনেকাংশে সেতুর মতো, তাই এই কাজ সেতু বিভাগই বাস্তবায়ন করবে।

এই প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুধু ঢাকা বাইপাসের কাজ করে দেবো। কিন্তু ঢাকা বাইপাসের উপরে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা সেতু বিভাগের আওতায় পড়ে।

সেতু বিভাগ বলছে, এটা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের কাজ নয়, এটা সেতু বিভাগের কাজ। গ্রাউন্ডের উপরে উড়াল সড়ক যদি সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন না করে, তবে তারা কি আকাশের উপরে সেতু নির্মাণ করবে?

অন্যদিকে, সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নদী বা পানির উপরের সেতু বাস্তবায়ন করবে সেতু বিভাগ। কিন্তু ভূমির উপরে সেতুসদৃশ যা কিছু হোক, এটা সেতু বিভাগের আওতায় পড়ে না।

এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাউন্ডের কোনো কাজ সেতু বিভাগ করে না। ঢাকা বাইপাসের উপরে উড়াল মহাসড়ক তাই সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। কারণ এটি ঢাকা বাইপাস গ্রাউন্ডের কাজ।

সরকার ঢাকা বাইপাসের উপরে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরেছে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্মাণ বাবদ ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাকি অর্থ দিয়ে অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৭ থেকে ২০৪১ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। এর আগে দেশে এতো বড় কোনো এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়নি।

উড়াল বাইপাসটি নির্মিত হলে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে মোট যানবাহনের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেলারের জন্য বরাদ্দ। এসব যানবাহনের নির্ধারিত টোল পরিশোধের জন্য নির্মাণ করা হবে টোল প্লাজা। পথচারী ও যানবাহন পারাপারের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হবে ২৪টি আন্ডারপাস।

ঢাকা বাইপাস গাজীপুরের জয়দেবপুর, কালিগঞ্জ এবং নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও বন্দর থানায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির আওতায় গাজীপুরের ধীরাশ্রমের কাছে রেল ওভারপাস, মীরের বাজারে রেল ওভারপাস, পূর্বাচলে গ্রেড সেপারেট ইন্টারেঞ্জ, ভুলতায় দু’টি ইউটার্ন আন্ডারপাস নির্মাণসহ ৭৮০ মিটার দীর্ঘ কাঞ্চন সেতু নির্মাণ করা হবে।

সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। এটি সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কোঅপারেশন (সাসেক) করিডরের অংশে পড়ায় ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। এর ফলে একে ঢাকার যানজট স্পর্শ করবে না। প্রস্তাবিত সড়ক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ না করেই যাত্রীবাহী ও মালবাহী হেভি লোডেড বাস ও ট্রাক দেশের উত্তর ও পশ্চিম অংশ থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ অংশ দিয়ে যাতায়াত করবে। কাজেই ঢাকা শহরের ট্রাফিক কনজেশান দূরীকরণের জন্যই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ।

সড়কটির উপরে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
সড়কটির আরও পরিপূর্ণ করে নির্মাণ করার লক্ষ্যে ‘সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস)’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে পিপিপি’র আওতায়। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, প্রকল্প এলাকায় ইউটিলিটি স্থানান্তর, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য বেতন-ভাতা ও অফিস খরচ দেওয়া হবে। এছাড়া প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য স্বাধীন প্রকৌশলী নিয়োগ করা হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের গ্যাপ দূরীকরণের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ কিছু আঞ্চলিক সড়কেও সংযোগ স্থাপন করবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম