বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিবন্ধিত ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা দুই মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ের কাছে এ তালিকা হস্তান্তর করেছেন।
সেই বৈঠকে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ৩০ সদস্যের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি করেছে দুই দেশ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব দুই দেশের পক্ষে কমিটিতে নেতৃত্ব দেবেন।
সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, তালিকা হাতে পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। নিবন্ধিত ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ১ হাজার ৬৭৩টি পরিবার রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, তালিকা পাওয়ার পর অনির্দিষ্টকাল সময়ক্ষেপণের কোনো অবকাশ নেই। তবে আগের বিভিন্ন বৈঠকের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মিয়ানমার এ বিষয়ে কথা দিয়ে কথা রাখে না। তারা বৈঠকে সব কিছুতেই সম্মতিসূচক রায় দেয়। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ভুলে যায়।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সাল থেকেই তারা এ নিয়ে বৈঠকে বার বার বসে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে ২২ বারের অধিক বৈঠকে বসেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তারা শনাক্ত করার নামে সময় পার করেছে প্রায় আড়াই দশক। এবারও তাদের মানসিকতা নিয়ে সংশয় আছে বলে জানান সেই কর্মকর্তা।
ঘটনার শুরু গত ২৫ আগস্ট। সেদিন রাখাইনে রোহিঙ্গা-বিরোধী দমন-পীড়ন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে। পরে সুযোগ বুঝে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
সেনাবাহিনীর ওই অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফেরার পথ তৈরি করতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গাদের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেন।
সেখানে বলা হয়, প্রথম দফায় শুধু এবার আসা শরণার্থীদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার। ওই সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা।
গত ১৯ ডিসেম্বর ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হলেও ১৬ জানুয়ারি নেপিদো শহরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার পর থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা মিয়ানমারের।
বাংলানিউজ