সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ২১৮১ অবৈধ স্থাপনার একটিও সরেনি

২১৮১ অবৈধ স্থাপনার একটিও সরেনি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও দখলমুক্ত হয়নি কর্ণফুলী নদীর দুই তীর। এ নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ব্যাহত হবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম। ক্ষতির মুখে পড়বে পুরো দেশের অর্থনীতি। কর্ণফুলী বেদখল থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই চট্টগ্রামে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। কর্ণফুলী রক্ষায় হাইকোর্টের দেওয়া তিন মাসের সময়সীমা গতকাল মঙ্গলবার শেষ হলেও সরেনি নদীর দুই তীরে থাকা দুই হাজার ১৮১ অবৈধ স্থাপনার একটিও। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছেথ সার কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, শিপইয়ার্ডের মতো ভারী শিল্পকারখানাও।

চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এ নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে ২০১০ সালের জুলাই মাসে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে

কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও নির্দেশ দেন আদালত। জরিপ করে নদীর দুই তীরে দুই হাজার ১৮১ অবৈধ স্থাপনা আছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুনানি শেষে গত ১৬ আগস্ট বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ সব স্থাপনা উচ্ছেদে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন।

এদিকে আলোর মুখ দেখেনি কর্ণফুলী রক্ষায় চার বছর আগে গঠিত হওয়া টাস্কফোর্স কমিটির কাজও। ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে কর্ণফুলীর উভয় তীর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে বন্দরে টাস্কফোর্সের বৈঠক ডেকে কর্ণফুলীর তীরে কেউ যাতে নতুন করে কোনো অবৈধ স্থাপনা গড়তে না পারে, সে জন্য নৌমন্ত্রী নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারাও বিষয়টি যথাযথভাবে নজরদারি করছে না।

দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল চার সংস্থাকে :আরএস ও বিএস খতিয়ান ধরে জেলা প্রশাসন তাদের জরিপে কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কথা উল্লেখ করে। স্থানীয়ভাবে এ ১৫৮ একর ভূমির মূল্য দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন স্থাপনা করে দখল করা হয়েছে কর্ণফুলীর তীর। তাই স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদেশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা ৯০ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে তা প্রতিপালন না হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং বি আইডব্লিউটিএথ এ চার সংস্থা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে রায়ে নদীর তীর দখল করে প্রতিষ্ঠিত নৌবাহিনী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটিসহ ৬ স্থাপনা সরকারি সংস্থার মালিকানার হওয়ায় সেগুলো অপসারণের আওতামুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সরেজমিন চিত্র :সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কর্ণফুলীর তীর দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছে রশিদ অ্যান্ড কোং, কাপ্তাই বোট বিল্ডার্স, শেখ আহমদ ডকইয়ার্ড, নুসরাত জাহান ডকইয়ার্ড, নুর-ই-মদিনা ডকইয়ার্ড, সোনা মিয়া ডকইয়ার্ড ও হাজি আবদুল গণি ডকইয়ার্ড। এ প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ণফুলীর প্রায় ১০০ একর তীর দখল করে জাহাজ তৈরি ও মেরামতের কাজ করছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এ কে খান অ্যান্ড কোং, ইন কনট্রেন্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী স্লিপওয়ে অ্যান্ড ডকইয়ার্ড, মেসার্স ইউরো শিপিং, আনোয়ারা অ্যাপারেলস, বাংলাদেশ রাইস মিল, বেঙ্গল আসাম রাইস মিল, দাদা সল্ট, কন্টিনেন্টাল এজেন্সিস, রাসেল অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আরেফা ট্রেডার্স, বিএ অ্যান্ড ব্রাদার্স, বিকন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ও আবদুস সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। দখল করা জমিতে কাঁচাঘর, দোকান, ভবন, বালুর স্তূপ, কলেজ, মৎস্য প্রকল্প, জসিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বিহার, দাতব্য চিকিৎসালয়, প্লাস্টিক, বোতল ও গার্মেন্ট কারখানাও গড়ে উঠেছে। জায়গা দখল করতে কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন মসজিদ এবং মন্দিরও। কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন রাজাখালী খালের মোহনায় পাকা ও সেমিপাকা ঘর তুলে ভাড়া দিতে দেখা গেছে নোয়াব খান, আজিজ খান ও ইউসুফ খান নামের তিন ভাইকে।

সংশ্লিষ্টরা যা বলেন :চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিন বলেন, হাইকোর্ট থেকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না পাওয়ায় তারা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারছেন না। তবে সিটি করপোরেশন, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, কেউ যাতে কর্ণফুলীর তীরে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে সে জন্য মাঝে মধ্যে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। কিন্তু কর্ণফুলী রক্ষায় দরকার সব সংস্থার সাঁড়াশি অভিযান।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নদী তীরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার মূল কাজ জেলা প্রশাসনের। তারা উদ্যোগ নিলে সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। সমকাল