শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ১৭ বছর পর খালেদাকে ছেড়ে গেলেন নেজামী

১৭ বছর পর খালেদাকে ছেড়ে গেলেন নেজামী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : প্রায় ১৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে গেলেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। চারদলীয় জোট গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ১৮ দলীয় জোট ও পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন নেজামী। দীর্ঘ সময় তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে খালেদা জিয়ার পাশে থেকেছেন।

এদিকে ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করার পর জোটটির অপরাংশ বিএনপিতে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের আরেকটি অংশ ক্ষমতাসীন মহাজোটেও রয়েছে। দলটির অপর একটি অংশও রয়েছে, যারা এখন নিষ্ক্রিয়।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৯৯৮ সালে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আদলে আরেকটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই প্রেক্ষিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত করে ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও সাম্যবাদী দলের একাংশ জোটে যোগ দেয়ায় ১৮ দল ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।

১৯৯৮ সালে গঠিত চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক ছিল ইসলামী ঐক্যজোট। তখন জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনী। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর প্রথম ভাঙনের শিকার হয় ইসলামী ঐক্যজোট। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে চেয়ারম্যান ও মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে চেয়ারম্যান ও মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীকে মহাসচিব করে অপর অংশের কমিটি গঠিত হয়।

পরবর্তীতে শায়খুল হাদিসের নেতৃত্বাধীন অংশ ইসলামী ঐক্যজোটের নাম পরিহার করে খেলাফত মসলিসের নামে দলীয় কার্যক্রম শুরু করে। সেই প্রেক্ষাপটে মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও মেজবাহুর রহমান চৌধুরীকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও মেজবাহুর রহমান বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং নিজেদেরকে নিজ নিজ অংশের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।

চারদলীয় জোট সরকারের শেষ পর্যায়ে মেজবাহুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয়। তারা এখনো সেখানেই অবস্থান করছে। অন্যদিকে মুফতি ইজহারুল ইসলামের অংশ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মুফতি ইজহার দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন অংশই ইসলামী ঐক্যজোটের মূল স্রোতধারা হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিত। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই অংশটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়।

এদিকে মুফতি আমিনীর মৃত্যুর পর মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী চেয়ারম্যান ও মুফতি ফয়জুল্লাহকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে থাকে।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মাওলানা নেজামী বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) বিএনপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যান। দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কনভেনশন থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নেজামী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন।

এ সময় নেজামী বলেন, ‘আমি ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের বের হয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি। এখন থেকে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামী ঐক্যজোট এখন থেকে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলবে।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট ৩০০ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলেও জানান তিনি।

বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ দেড় যুগের রাজনৈতিক সম্পর্ক ইসলামী ঐক্যজোটের। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক দিনের চাপা ক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত হয় গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’র সমাবেশে তাদের দাওয়াত না দেয়ার বিষয়টি। অনেকদিন পর রাজধানীতে বিএনপির বড় ধরনের এ কর্মসূচিতে শুধু ইসলামী ঐক্যজোট নয়, শরিকদের কাউকেই দাওয়াত দেয়া হয়নি। এ নিয়ে জোটে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জোটের অন্যতম দুই শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট থেকে আপাতত দূরত্ব বজায় রাখতে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি এককভাবে করার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ থেকেই ইসলামী ঐক্যজোট এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর সঙ্গে সরকারের ক্রমাগত চাপ ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতিও যুক্ত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরপর বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রাকিব অ্যাডভোকেট। এ সময় তিনি জানান, তার নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকবে। বাংলামেইল২৪ডটকম