স্টাফ রিপোর্টার ॥
মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) থেকে: শুক্র ও শনিবার পছন্দের দিন। তবে অফিস ডেও মানেন না মন্ত্রী। পদ্মায় ছুটে আসেন। কোনোদিন খুব ভোরে, কখনো সচিবালয়ে কিছুটা কাজ সেরে একটু বেলা বাড়িয়ে। কোনোদিন ভরদুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় কিংবা রাতেও।
না, নানা সময়ে পদ্মার নানা রূপ দেখতে নয়! কবিমন্ত্রীর এই আসা স্রেফ পদ্মায় সেতু নির্মাণকে ঘিরে। দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের গৌরবগাথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে বিশাল পদ্মার ওপর বিশ্বের বৃহত্তম সেতুগুলোর একটি। যার দায়িত্ব সেতুমন্ত্রীর ওপর। তিনি তো আসবেনই।
কোথাও কোনো কাজে এতটুকু যাতে খুঁত না থেকে যায় তার জন্যই মন্ত্রীর এই আত্ম-নিয়োজন।
মন্ত্রী জানেন, তিনি নিজে যদি নিবেদিতপ্রাণ হন, তাহলে অন্যদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে, পদ্মাসেতুর কাজ এগিয়ে যাবে সঠিক গতিতে।
তাই হচ্ছে। রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে বাংলানিউজের একটি টিম পদ্মাপাড়ে পৌঁছায় সকাল সাড়ে সাতটায়। এদিনও মন্ত্রী পদ্মার পাড়ে। তিনি এসেছেন ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে করে। এখানেই সভা করবেন। প্রথমে ওপারে জাজিরায়, পরে এপারে মাওয়ায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন পদ্মার মূলসেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ। সেজন্যও প্রস্তুতি চলছে। এসব নিয়েই মন্ত্রীর ব্যস্ততা।
এ নিয়ে মন্ত্রীর ১৭৯তম বার আসা এই পদ্মার তীরে। এপারে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ১৩০ বার আর ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরায় ৪৯ বার। স্রেফ সেতু নির্মাণকে ঘিরেই। দেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর সঙ্গে যেন লেগেই আছেন তিনি। কোনো কোনোদিন একাধিকবারও এসেছেন।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলেও এসেছিলেন একদফা। মন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেরে ওঠেন না সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। তাই অনেক অনেকবার তাকে একাও চলে আসতে দেখা গেছে পদ্মার পাড়ে।
কেউ কেউতো এমনও বলছেন, ‘মনে হয় মন্ত্রী ঢাকায় থাকেন না, পদ্মার পাড় থেকে মাঝে মাঝে যান’।
সেটা হয়তো নয়। পদ্মার তীরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বছর ঘুরতে চললো। তার মধ্যে ১৭৯ বার এর কাজ তদারকিতে আসা, এমনটা আর কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর ক্ষেত্রে কখনো ঘটেছে কি-না জানা নেই।
পদ্মার তীরের মানুষেরা, কিংবা যারা কাজ করছেন তারা জানালেন, মন্ত্রী যখন পদ্মায় আসেন তখন বেশিরভাগ সময়ই তাকে একা দেখা যায়। একাই হাঁটছেন পদ্মার তীরে। প্রটোকলের ধার ধারেন না তিনি।
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গোয়েন্দা সংস্থার কথাও শুনতে চান না তিনি। মন্ত্রীকে টেনে নিয়ে আসে পদ্মাসেতুর কর্মযজ্ঞ। পদ্মার তীরের সব কাজ সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখেন তিনি।
এ কারণেই বুঝি কাজ এগিয়ে চলেছে তার নিজ অব্যাহত গতিতে। গতিশীল এই মন্ত্রীর গতির উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেকথা জানিয়েছেন মন্ত্রী নিজেই।
মন্ত্রীর ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জিং কোনো কাজ হাতে নিতে পছন্দ করেন। তার নেওয়া চ্যালেঞ্জ যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় সেটাই আমার লক্ষ্য। আর এ চ্যালেঞ্জ কেবল প্রধানমন্ত্রীর বা আমার নয়, এটা গোটা দেশবাসীর চ্যালেঞ্জ। আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করছি। আর সেজন্যই আমাদের আত্মনিয়োজন’।
এসব কারণেই মন্ত্রী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন। পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ বশে এনে স্বপ্ন ফুটিয়ে তোলার সেনাপতির ভূমিকায় আছেন তিনি।
মন্ত্রী নিজেই জানান, তিনি ঘুম থেকে উঠেন খুব ভোরে। তখনই প্রধানমন্ত্রীকে সেতুর কাজের অগ্রগতি জানান আর প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে দিনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
‘আর প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে রাত দুইটায়ও ফোন দিলে পাওয়া যায়’- বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর নিবেদিত হওয়া তার মন্ত্রণালয়কে ঘিরেও। স্বপ্নের পদ্মাসেতু নিয়েই কেবল নয়, মন্ত্রীর ব্যস্ততা ঢাকার মেট্রোরেল, এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ছয়লেন নিয়েও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রী একটা কমিটমেন্টের জায়গা থেকে কাজ করেন। পকেট ভারি করার মন্ত্রী তিনি নন। তাকে কোনো ‘পার্সেন্টেজ’ দিতে হয় না।
অন্যরা কেনো, মন্ত্রী নিজেও এমন কথা বার বার বলেছেন নানা বক্তৃতায়। মন্ত্রীর ভাষায়, একসময় দুর্নীতি আর যোগাযোগ সমার্থক ছিলো। সেই কলঙ্ক তিলক এরই মধ্যে মুছে দিতে পেরেছি, এটা আমি দাবি করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘কাজে আমার তৃপ্তি আছে, অতৃপ্তিও আছে, আনন্দও আছে, বেদনাও আছে, শোকানুভূতি আছে কষ্টানুভূতিও আছে। এ এক মিশ্র অনুভূতি।
‘সফল মন্ত্রী এ দাবি আমি পুরোপুরি করার যোগ্যতা এখনও অর্জন করিনি। আমাদের দেশে কোনো মন্ত্রী মঞ্চে উঠলেই ‘সফল মন্ত্রী-সফল মন্ত্রী’- বলে তোতা পাখির মতো বলা হয়। আসলে সফল হলে জনগণই বলবে। নিজের সফলতা নিয়ে ঢোল পেটানোর কোনো বিষয় নাই’-মনে করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বলেছেন, শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে আজ পর্যন্ত কাজ করছি।