শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > হোসেন মনসুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ

হোসেন মনসুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কর্ণফুলী গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডে জনবল নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে গত মঙ্গলবার কমিশনে পেশ করা প্রতিবেদনটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক ঋতিক সাহা ও সহকারী পরিচালক আল আমিন যৌথভাবে জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করেছেন। তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুদকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বুধবার রাতে বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি কমিশনে পেশ হয়েছে। প্রতিবেদনে যার যে অপরাধ তা তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের দৈনন্দিন সভায় প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্ণফুলী গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া ড. হোসেন মনসুরের নির্দেশে এবং অন্যদের সংশ্লিষ্টতায় অবৈধপন্থায় হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সানোয়ার হোসেন, সাবেক সচিব ও বর্তমানে উপ মহাব্যবস্থাপক আমির হামজা, সাবেক ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) চৌধুরী আহসান হাবীব এবং সাবেক এমডি জামিল আহমেদ আলীম।

দীর্ঘ প্রতিবেদনে নিয়োগের ক্ষেত্রে হোসেন মনসুরের সংশ্লিষ্টতার বিবরণ রয়েছে। পেট্রোবাংলার অধীন ১৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটির মাত্র প্রতিবেদন দাখিল হল। আরও ১২টি প্রতিবেদন পর্যায়ক্রমে জমা পড়বে।

পাঁচ বছর ধরে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গত বছরের অক্টোবরে এ পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন ড. হোসেন মনসুর।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির নিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। কোম্পানির জিএমের নেতৃত্বে কমিটির নিয়োগ-সংক্রান্ত সভায় তিনটি পদের জন্য ৩১টি শূন্যপদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত এ পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৪৩ জন। নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং নারী কোটা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলেও কম্পিউটার অপারেটর পদের মূল্যায়নে অভিজ্ঞতার জন্য কোনো নম্বর দেওয়া হয়নি। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে নীতিমালা অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার জন্য ৫০ নম্বর, মৌখিক পরীক্ষায় ১৫ আর শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৩৫ নম্বর নির্ধারিত ছিল।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নীতিমালা পরিবর্তন করে লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৪০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ১৫ ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৩৫ নম্বর নির্ধারণ করে নতুন নীতিমালায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। মেধাবী প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বর পেয়েও চাকরি পাননি। কিন্তু পছন্দের প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় ১৫-২০ নম্বর, মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫ নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়েছেন।

এর আগে হোসেন মনসুর এবং পেট্রোবাংলার ১৩টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিশনের উপপরিচালক আহসান আলীকে। এরপর আহসান আলীকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হলে গত ১৩ এপ্রিল সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালামকে দায়িত্ব দেয় কমিশন।

অনুসন্ধান শেষে আবদুস সালাম পেট্রোবাংলার ড. হোসেন মনসুরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনে। কমিশন এ প্রতিবেদনটি আমলে না নিয়ে তাকেও এ অনুসন্ধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। পরে অভিযোগটি নতুনভাবে অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক ঋতিক সাহা ও সহকারী পরিচালক আল-আমিনকে দেওয়া হয়।

দুদকের এ দুই কর্মকর্তার যৌথ প্রতিবেদনে হোসেন মনসুরসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম