বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ২০১৩ সালের ৫ মে। ঢাকা অবরোধের নামে রাজধানীতে সকাল থেকেই চলে ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল, ফাঁকা গুলি চালালেও মতিঝিল-পল্টন এলাকা থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখানে জ্বালিয়ে দেয়া হয় দোকান পাট, অফিস আদালত।
তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বায়তুল মোকাররমের আশপাশে অবস্থিত ধর্মীয় বইয়ের দোকান পর্যন্ত। কেটে ফেলা হয় রাস্তার আইল্যান্ডে লাগানো গাছ।
সারাদিন তাণ্ডব চালিয়ে রাতে তারা অবস্থান নেয় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। সেখান থেকে উঠে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও উল্টো হেফাজত কর্মীরা পুলিশের উপর আক্রমণ চালাতে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে এক পর্যায়ে রাত দু’টোর দিকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালায় পুলিশ, ৠাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী। রাজধানী থেকে সরিয়ে দেয়া হয় হেফাজত কর্মীদের। পরদিন সোমবার নারায়ণগঞ্জে তারা আবারও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই সংঘর্ষে বিজিবিসহ মারা যায় বেশ কয়েকজন।
আলোচিত সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি সোমবার। সেদিনের সহিংস ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছিলো ৪২টি। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর পার হতে চললেও সুরাহা হয়নি মামলাগুলোর। গ্রেফতার হয়নি জড়িতরাও।
শুধু রাজধানীতে নয়, একই হাল হেফাজতের তাণ্ডবে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য থানায় দায়ের করা মামলাগুলোরও।
তাণ্ডবের এক বছরের মাথায় রহস্যজনক কারণে দায়ের করা সব মামলাই কার্যত এখন ‘ডিপফ্রিজে’। প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার মূল আসামিরা। তাদের গ্রেফতারে নেই পুলিশি কোনো তৎপরতাও। যদিও সেদিন হেফাজত কর্মীদের হামলা থেকে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি সদস্যরাও রক্ষা পাননি।
পল্টনে পুলিশের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ের ভেতরে পুলিশ সদস্যদের আটকে রেখে বাইরে থেকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো হেফাজত সমর্থকরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন সারাদেশ থেকে নাশকতাকারীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এজন্য আসামিদের চিহ্নিত করতে গিয়ে তদন্তে সময় লাগছে। তাছাড়া ওই ঘটনার পর পুলিশ রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলা এবং জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতেও তদন্তে যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি। তবে অনেকগুলো মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলার অভিযোগপত্র শিগগিরই দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এই মামলার বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। আবার অনেকে জামিনও পেয়েছেন। এছাড়াও অনেকে এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন।
জানা যায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের ৪২টি মামলার মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে পল্টন থানায় ৩৩টি, মতিঝিল থানায় ৬টি এবং রমনা থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে ১৩টি মামলা তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি মামলার তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম