শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > হারতে চাই না জীবন যুদ্ধে

হারতে চাই না জীবন যুদ্ধে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: আজগর আলী। বয়স ৬০’র গণ্ডি পেরিয়েছেন বছর ৭ আগেই। সফেদ রঙ ধারণ করেছে মাথার সবকটি চুল। মুখ ভর্তি দাড়িরও একই অবস্থা। রুটি-রুজির জন্য এই বয়সেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত করেন হাড় ভাঙ্গা খাটুনি।

জীবন যুদ্ধে পরাজয় মানতে নারাজ ষাটোর্ধ্ব আজগর আলী পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বেছে নেন দিনমজুরের কাজ। শুরুতে ছিলেন খেত মজুর (কৃষি শ্রমিক)।

এরপর মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালের গৃহ নির্মাণ শ্রমিক(ঘরামী), রিকশা চালক থেকে শেষ বয়সে এসে বেছে নিয়েছে নির্মাণ শ্রমিকের(রাজমিস্ত্রী) পেশা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি টানা পরিশ্রমের বিনিময়ে মেলে ৩০০ টাকা। এ দিয়েই চলে দু’জনের সংসার।

বৃহস্পতিবার(৩০ এপ্রিল’২০১৫) দুপুরে কাজের ফাঁকে বাংলানিউজকে জীবন গল্পের কিছু অংশ শোনান তিনি। কিশোরগঞ্জে জন্ম নেওয়া আজগর আলী চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। দারিদ্রতার কারণে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারিনি ৬ ছেলে-মেয়ের কেউই।

শারীরিক পরিশ্রম করেই বড় করেছেন ছেলে-মেয়েদের। ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকে। সংসার পেতেছে ছেলেরাও।বিয়ের পর একে একে চার ছেলেই ছেড়ে গেছে। মেয়েরাও খোঁজ নেয় না। বৃদ্ধা স্ত্রী ও নিজের পেটের খোরাক জোটাতে বাধ্য হয়েই বেছে নিয়েছে নির্মাণ শ্রমিকের পেশা।

ইট-পাথর, বালু-সিমেন্টের ভারি কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। এরপরও যত কষ্টই হোক কাজ করেই জীবন চালাবো। ভাত-কাপড়ের জন্য কারও কাছে হাত পাতবো না বলেন আজগর আলী।

জীবন যুদ্ধে এমনই হার মানতে নারাজ পিরোজপুরের আশেয়া বেগম(৬৩)। জীবিকার তাগিতে গৃহ শ্রমিকের (অন্যের বাস-বাড়িতে কাজ) পেশা বেছে নিয়েছেন এই বৃদ্ধা। কাপড়, তিন বেলা খাওয়া ও ৫’শ টাকা মাস চুক্তিতে রামপুরার একটি বাসায় কাজ করেন। এছাড়া ঠিকা(খণ্ডকালীন) কাজ করেন আরও ২ বাড়িতে।

স্বামী, ছেলে ও ছেলের বৌ নিয়ে সংসার তার। বয়সের ভারে স্বামী কোন কাজ করতে পারেন না। ছেলে রিকশা চালক। তাই সংসার চালাতে বৃদ্ধা বয়সে তাকে বেছে নিতে হয়েছে গৃহ শ্রমিকের পেশা।

জীবন সংগ্রামী আর একজন রিকশা চালক রজত আলী (৬৮)। ঢিলা হয়ে গেছে শরীরের চামড়া। শিরাগুলোও ফুলে উঠেছে। এক পলক তাকালেই সহজে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। এ বয়সেই ৩ চাকার রিকশায় যাত্রী চাপিয়ে রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই বৃদ্ধ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ফকিরাপুল থেকে যাত্রী নিয়ে রজত আলীর ছুটে চলার দৃশ্য চোখে পড়ে। সেখান থেকেই পিছু নিয়ে খিলগাঁও তালতলায় এসে কথা হয় এই জীবন সংগ্রামী মানুষটির সঙ্গে।

রজত আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন এক বেলা রিকশা চালান। রিকশা চালিয়ে দিনে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে নিজের ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ।

এ বয়সে কেন রিকশা চালাচ্ছেন? ছেলে-মেয়ে নেই? এমন প্রশ্ন করতেই চোখ ছলছল করে উঠে তার। এরপর কোন কথা না বলেই ঘামে ভরা ক্লান্ত শরীর নিয়ে রিকশা চেপে চলে যান রজত আলী।

এ শুধু এক আজগর আলী, আয়েশা বেগম ও রজত আলীর জীবন গল্প না। রাজধানী ঢাকাতেই আছেন এমন অসংখ্য আজগর, আয়েশা, রজত আলীরা। জীবনের শত প্রতিকূল অবস্থাতেও যারা হার মানতে নারাজ।

যারা যানেন না মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস কি। যাদের কাছে নেই নির্দিষ্ট কোন শ্রমঘণ্টা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি খেটে যান একটানা হাড়ভাঙা খাটুনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম