শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > হামলা নিয়ে যা ভাবছেন ইরানিরা

হামলা নিয়ে যা ভাবছেন ইরানিরা

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসীকে’ হত্যার দাবি করছে ইরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বুধবার ভোরের ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গতকালের ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে কয়েকজন ইরানির প্রতিক্রিয়া নিয়েছে বিবিসি।

গত শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দরে ড্রোন থেকে ছোড়া মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার সোলেইমানি নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রতিশোধের এই হামলা চালিয়েছে ইরান। তারা বলছে, সোলেইমানি হত্যার বদলা নিতেই এই হামলা। তারা কোনো যুদ্ধ চায় না। আর যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করা হবে।

রামিস নামের এক ইরানি নাগরিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘এই হামলা করতেই হতো। যুদ্ধ ভালো নয় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিল সবসময়। মার্কিন প্রশাসনের এসব মুখ বন্ধ করা উচিত ছিল। আমি এটা নিশ্চিত যে ইরান এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেবে না।

ইরানের হামলায় হতাশ আফশিন নামের একজন বলছিলেন, ‘ইরানের এই হামলা খুবই হতাশাজনক। দেশের একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করা হলো কিন্তু প্রতিশোধ হিসেবে তারা (ইরান সরকার) এমন একটা হামলা করলো যাতে উল্লেখ করার মতো কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটা ইরানের একটা ব্যর্থ পরীক্ষা। এরপর ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো কিছু করতে পিছপা হবে না।

নাজানিন নামের এক ইরানি বলেন, ‘ইরানের মানুষকে দেখানোর জন্য এই পদক্ষেপ। আমাদের দেখানো হলো যে আমরা (ইরান সরকার) বদলা নিয়েছি। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্যের) বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানে তাই তারা কেউই যুদ্ধে জড়াতে চায় না। আলোচনা শুরুর জন্য এটা একটা রাজনৈতিক পদক্ষেপ।’

তবে মোাহাম্মদ নামের একজন ইরান সরকারের পক্ষে কথা বললেন। তিনি গতকালের ওই হামলা সম্পর্কে বিবিসিকে বলেন, ‘এই হামলার প্রয়োজন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত যে তারা যদি আমাদের (ইরানের) ক্ষতি করতে চায় তাহলে তাদেরকে এর কোনো জবাব না দিয়ে কোনোভাবেই ছাড়া দেয়া হবে না।

এদিকে ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। হামলার খবর আগেই জানতো যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃত হামলার আগেই ট্রাম্প প্রশাসনে সম্ভাব্য হামলার তথ্য চলে যায়। বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক ও হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তার বলছেন গোয়েন্দা সূত্র ও ইরাক থেকে তাদেরকে হামলা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই আমরা জানতাম এবং ইরাকিরাও আমাদের এ সম্পর্কে বলেছিল।’

ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা আগেই আমাদের কাছে খবর এসেছিল যে ইরানিরা আমাদের ঘাঁটিতে হামলা চালাতে যাচ্ছে।’ তবে ঊর্ধ্বতন এক সামরিক কর্মকর্তা এই ঘটনায় ইরাকের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন অভিহিত করে বলেন, ‘তারা (ইরাকিরা) যদি সতর্ক করতো তাহলে সেটা কয়েক ঘণ্টা আগে হতো না।’

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ (প্রতিরক্ষা প্রধান) জেনারেল মার্ক মিলে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার।

বুধবারের হামলার পর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত এক টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের আইন আল আসাদ এবং কুর্দিস্তানের ইরবিলের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।

তবে মার্কিন এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বলেন, হামলার পর তাদের কাছে যাওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইরানের প্রায় দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করার কাজ চলছে।

এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর এক যৌথ কমান্ড বিবৃতিতে জানিয়েছে, সব ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। ভোরের ওই হামলায় তাদের কোনো সৈন্য হতাহত হয়নি। হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় রাত পৌনে ২টায়। হামলা চলে রাত পৌনে ৩টা পর্যন্ত।

হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সব ঠিক আছে, ইরাকে দুটি বিমানঘাঁটিতে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের তথ্য মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যা হয়েছে, ভালো হয়েছে! আমাদের কাছে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী রয়েছে। বিশ্বের যেকোনও স্থানে তারা রয়েছে।’