হাওরে নতুন ধানের ঘ্রাণ, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

সাইদুর রহমান নাঈম, ( কিশোরগঞ্জ) থেকে

হাওর জনপদের অনেক এলাকায় এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াই এর কাজ৷ হাওর অঞ্চলের গ্রামগুলোয় এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। অস্থায়ী খলায় চলছে শত শত কৃষকদের ধান মাড়াই করার দৃশ্য।

কিছু কিছু হাওরে এখনো কাঁচা রয়েছে ধান৷ কৃষকদের ধারণা বৈশাখ মাসের পুরোটা সময় লাগবে সবগুলো জমির ধান কাটতে৷ তবে এর আগে অধিকাংশ হাওরে ধান কাটা পুরোপুরি শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ যাদের মেশিম তারা পরিচিত ও প্রভাবশালীদের মুখ দেখে ধান কাটছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ৷ এ কারণে ফসল পেকে গেলেও কাটতে পারছেনা অনেকেই৷

কিশোরগঞ্জের কয়েকটি হাওর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়৷ সরেজমিনে নিকলী উপজেলার কয়েকটি হাওরে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধান কাটা প্রায় শেষ মুহূর্তে রয়েছে৷ কিছু জমি আধাপাকা রয়েছে। একদিকে হারভেষ্টার মেশিনে আরেকদিকে শ্রমিকরা ধান কাটার কাজ করছে৷ শ্রমিকের চেয়ে মেশিনে ধান কাটতে বেশি দেখা গেছে কৃষকদের৷

বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর হাওরে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধান এখনো কাঁচা রয়েছে। যেগুলো পেকেছে তা মেশিনের মাধ্যমে কাটা হচ্ছে। ধান কাটার পরে রাস্তার পাশে এবং অস্থায়ী খলার মধ্যে রাখা হচ্ছে৷ সেখানে কৃষকরা কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন আবার কেউ অটোরিকশা, ট্রলি দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন৷

হুমাইপুর গ্রামের কৃষক জমির মিয়া বলেন, ধান করে আমরা কৃষক কিন্তু লাভবান হচ্ছিনা৷ ৮ শ থেকে ৯ শ টাকা মণে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে৷ মহাজনের পাওনা টাকা দিতে হবে এজন্য কম টাকায় নতুন ধান বিক্রি করে দিতে হচ্ছে৷ আমার মতো অনেকেই টাকা ধার নিয়ে জমি লাগিয়েছে৷ আমরা ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভবান হতে পারতাম৷

ধান ক্রয় করা ব্যাপারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ৮ শ ৩০ টাকা মণে ধান ক্রয় করছি৷ এই ধান ভৈরব মোকাম হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে৷ কৃষকরা বিক্রি করছেন বলেই তো আমরা কিনছি।

একি এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান হবি বলেন, নতুন ধান নিয়ে আমাদের স্বপ্ন৷ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ থেকে মেয়ে বিয়ে দেয়ার খরচ এই ধান থেকেই। বর্ষায় আমরা মাছ শিকার করি আর শুকনো সময় ধান আমাদের অর্থকরী ফসল৷ তাই সরকার সঠিক দাম নির্ধারণ করে দিলে কৃষক ও কৃষি বেঁচে থাকবে।

কৃষকরা বলছেন, খরচ ও ঋণ মেটাতে অনেক চাষি ধান ঘরে না তুলেই বিক্রি করে দিচ্ছেন ৮২০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে। যেখানে এক মণ বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। এতে খুব একটা খুশি হতে পারছেন না কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধানা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে শুধু হাওরেই ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

গত বছর ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২০০ টাকা প্রতি মণ। তবে এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৪০ টাকা প্রতিমণ। কেজিপ্রতি যার দাম ৩৬ টাকা। সরকার এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে। কৃষি শ্রমিকের সংকট কাটাতে হাওরে ২২০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন ধান কাটার কাজ করছে। এছাড়া প্রতিদিনই বাহিরের জেলা থেকে হার্ভেস্টার মেশিন আসছে।

কিশোরগঞ্জের হাওরে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হেক্টরপ্রতি অন্তত ১০ মণ ধান বেশি হচ্ছে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। অষ্টগ্রামের সব হাওরের হিসাব একই। চিটা হয়নি। এখন পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান ৮০ ভাগ পাকা হয়ে গেলে কেটে ফেলার কৃষি বিভাগের পরামর্শের পর কাটায় গতি এসেছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন, ধান কাটার সার্বিক বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি সন্তুষ্ট। ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ১২ মণ বেশি হচ্ছে। দামও মন্দ নয়। সব মিলিয়ে ভালো করে মাঠের ফলন গোলায় তুলতে পারলে এই খুশি মহাখুশির মাত্রা পাবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ভালো ফলনের খুশি ধরে রাখতে ধান ৮০ ভাগ পাকা মাত্র কেটে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি । কারণ, ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টি হাওরের পাকা ধানে মই দেওয়ার আশঙ্কা সব সময় থেকেই যায়।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫