শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > হরতালে সুবহানের রায়, সতর্ক র‌্যাব-পুলিশ

হরতালে সুবহানের রায়, সতর্ক র‌্যাব-পুলিশ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সুবহানের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ কয়েকটি এলাকায় সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, বুধবার সকালে নজরদারির পাশাপাশি কয়েকটি এলাকায় বিশেষ তল্লাশি শুরু হবে। ট্রাইব্যুনাল এলাকায় প্রবেশপথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার আবদুস সুবহানের মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন। এরপর হরতাল-অবরোধের নিরাপত্তার মধ্যেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘অন্যন্য রায়ের মতোই এবার আদালতসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তল্লাশি ছাড়া কেউ আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। সেখানে যানবাহনের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া শাহবাগ, পল্টন, ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ।’

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘রায়কে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে র‌্যাব। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট তৈরি করে তল্লাশি করা হবে। সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়েন্দা দলও কাজ করবে।’

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল বাতেন বলেন, ‘রায় উপলক্ষে অন্যদিনের চেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।’

এদিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানান, ‘নিয়মিত’ টহলের অংশ হিসেবে বিজিবির সদস্যরাও মাঠে থাকবে।

যতো অভিযোগ সুবহানের বিরুদ্ধে
সুবহানকে নয়টি অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্র অপরাধ।

অভিযোগ-১
১৯৭১ সালে মুহাম্মদ আবদুস সুবহান তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও বিহারীদের নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়া স্বাধীনতাকামী লোকদের অপহরণের পর হত্যা করেন।

অভিযোগ-২
১৯৭১ সালে ১৩ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে ঈশ্বরদী যুক্তিতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে লুটপাটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে ৫ জন নিরীহ-নিরস্ত্র লোককে হত্যা ও ৩ জনকে গুরুতর আহত করা হয়।

অভিযোগ-৩
১৯৭১ সালে ১৬ মে ঈশ্বরদী অরণখোলা গরুর হাট থেকে ২ জন লোককে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় (ঈশ্বরদী, পাবনায়) নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

অভিযোগ-৪
১৯৭১ সালে ২ মে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মিরা ঈশ্বরদী সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অসংখ্য বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন লোককে হত্যা করে।

অভিযোগ-৫
১৯৭১ সালে ১১ মে মাওলানা সুবহানের নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে পাকিস্তানি আর্মি পাবনা সদর থানাধীন কুলনিয়া ও দোগাছি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ৭ জন নিরীহ-নিরস্ত্র ও স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা করে এবং কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।

অভিযোগ-৬
১৯৭১ সালে ১২ মে মওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মির একটি বিরাট বহর সুজানগর থানাধীন সাতবাড়িয়া ইউনিযয়নর কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৩-৪শ লোককে গণহত্যা করে। বিভিন্ন লোকজনের বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

অভিযোগ-৭
১৯৭১ সালের ২০ মে মওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মিরা পাবনা সদর থানার ভাড়ারা গ্রামে অভিযান চালিয?ে ১৮ জন নিরীহ লোককে অপহরণ করে। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রামের একটি স্কুলে হত্যা করে। অপর ১৭ জনকে পাবনা সদর নূরপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়ে আটক করে নির্যাতন করে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আটঘরিয়া থানার দেবত্তোর বাজারের পাশে বাঁশবাগানে গুলি করে হত্যা করে। বাকিদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৮
১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের যে কোনো দিন মাওলানা সুবহান রাজাকারদের নিয়ে আতাইকুলা থানার (সাবেক পাবনা সদর থানা) দুবলিয়া বাজার থেকে ২ জন স্বাধীনতাকামী লোককে অপহরণ করে কুচিয়ামাড়া গ্রামে একটি মন্দিরের ভেতরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৯
১৯৭১ সালে ৩০ অক্টোবর মাওলানা সুবহান রাজাকারদের নিয়ে ঈশ্বরদী থানার বেতবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাড়িতে লুটপাটসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং ৪ জন লোককে অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে।

কে এই সুবহান?
মাওলানা সুবহান ১৯৩৬ সালে পাবনা জেলার সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় তালাবিয়া আরাবিয়া সংগঠনের সদস্য হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন।

পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন পাবনা জেলার জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং দলের কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য। ১৯৭০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলাম থেকে পাবনা সদর আসনে এমএনএ নির্বাচন করে পরাজিত হন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইয?াহিয?া খানের শুভ দৃষ্টিতে তিনি তথাকথিত উপ-নির্বাচনে পাবনা সদর আসন থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানের শুরুতেই তিনি পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে পাবনা জেলায় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন।

১৯৭১ সালে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের যে কোনো দিন পাবনা জেলায় পিস কমিটি গঠিত হয়। তিনি ছিলেন ওই কমিটির সেক্রেটারি। কিছুদিন পর ওই কমিটি বাতিল করে নতুনভাবে পাবনা জেলায় পিস কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটিতে তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োজিত হন।

তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে অপহরণ, হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

তিনি পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু সম্প্রদায়ের নামের তালিকা করে পাকিস্তানি আর্মিদের কাছে সরবরাহ করতেন। পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারদের সঙ্গে থেকে এবং নেতৃত্ব দিয়ে হত্যা ও গণহত্যায় অংশ নিতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাবনাসহ ঢাকা শহরে মিটিং করে স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য দেন।

পাবনা জেলায় তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী স্লোগান দেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে ইয়াহিয়া সরকারের পতন দেখে মওলানা সুবহান গোলাম আযমের সঙ্গে পাকিস্তান পালিয়ে যান।