শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > হরতালে প্রথম দিনে নিহত ৭

হরতালে প্রথম দিনে নিহত ৭

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘন্টার হরতালের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থককারিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, মিছিল, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ৬০ ঘণ্টা হরতালে এখন পর্যন্ত সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে যশোরের অভয়নগরে এক যুগলীগ নেতা, ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে এক যুবদল কর্মী এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে এক জামায়াত কর্মী, পিরোজপুরের জিয়ানগরে জামায়াত-বিএনপির হামলায় এক যুবলীগকর্মী, চট্টগ্রামের সীতাকু-যুবলীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন, টাঙ্গাইলে একজন কর্মী ও বগুড়ায় বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে একজন কর্মী নিহত হয়েছে।

৬ বাসে আগুন

হরতাল শুরুর আগেই রবিবার ভোরে মিরপুরে বি আরটিসির বাস ডিপোতে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে ছয়টি বাস পুড়ে গেছে।পুলিশ ও বাস ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কয়েকজন লোক দেয়াল টপকে বাস ডিপোতে আগুন দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে।আগুনে দুটি বাস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া চারটি বাসেরও বেশিরভাগ পুড়ে গেছে।

সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

রবিবার ভোর পাঁচটার দিকে নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে আশুলিয়ার কবিরপুর এলাকায় দুর্ঘটনাকবলিত একটি বাসে আগুন দেয় পিকেটাররা। একই সময়ে আশুলিয়ার নরসিংহপুরে দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় হরতাল-সমর্থকরা। দুটি মোটরসাইকেলে করে এসে যুবকেরা পেট্রল ঢেলে বাস দুটিতে আগুন দিয়ে চলে যায়।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলে বিএনপির কর্মীরা বাধা দেন। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

ভোর ৬টার দিকে ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় যুবকেরা। এর কিছুক্ষণ পর সাভারের গেন্ডা এলাকায় একটি পেট্রলপাম্পে থেমে থাকা বাসে আগুন দিয়ে চলে যায় পিকেটাররা।

এদিকে, আমিনবাজারে পাঁচ থেকে ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ডেইরি ফার্ম গেইটে সকালে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

খুলনা ও গাজীপুরের মেয়রের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় রবিবার সকালে সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। মিছিলের পর সমাবেশে মেয়রসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

এর কিছুক্ষণ পরই রওশন সড়ক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং কয়েকটি ককটেল ফাটায়। জবাবে পুলিশ ৮-১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, ভোরে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া পুবাইলেরমীরের বাজর এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা।

টঙ্গীতে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির কর্মীরা। পুলিশ কলেজ গেট ও টঙ্গী বাজার এলাকা থেকে

শিবিরকর্মী সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে।

খুলনায় এবারই প্রথম পুলিশের বিনা বাধায় হরতালের পক্ষে মিছিল করেছেন সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

তাদের নেতৃত্বে রবিবার সকালে পিটিআই মোড় হতে মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেডি ঘোষ রোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে এখানে হরতালের পক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, হরতালের কারণে খুলনা থেকে দুরপাল্লার বাসসহ কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করছে না। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

যশোরে পিকেটারদের হামলায় পৌর যুবলীগ সম্পাদক নিহত

যশোরের অভয়নগরে পিকেটারদের হামলায় নওয়াপাড়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছে। হরতালবিরোধী শোডাউনে রাজপথে থাকার সময় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

তার নাম আলমগীর হোসেন শিমুল (৩৫)। তিনি বহু হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি এবং এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিতি ছিলেন।

পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৮ দলীয় জোটের হরতালের প্রথম দিন রবিবার সকাল ৯টার দিকে হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াত মিছিল বের করলে নওয়াপাড়া পুলিশ ফাড়ি এলাকায় আলমগীরের নেতৃত্বে হরতালবিরোধীরা তাতে বাধা দেয়।

এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আলমগীর নিহত হন।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আবদুস সালেক জানান, লাশ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে।

নিহত আলমগীরের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর ও হত্যাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে যুবদলের এক কর্মী ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছেন। যুবদলের কর্মীর নাম মারুফ শেখ (১৮) এবং যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুল (৩৫) । এ সময় আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে হরতাল সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিএনপি হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে মারুফ শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘ্টনাস্থলেই মারা যান। গুলির শব্দ শুনে গৃহবধূ ফাতেমা ঘরের জানালা বন্ধ করতে গেলে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হরতাল সমর্থক বাদলকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টার দিকে থেকেই যুবলীগ নেতা শিমুল লোকজন নিয়ে নওয়াপাড়ায় হরতাল বিরোধী মহড়া দিচ্ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে তারা নওয়াপাড়া ফেরিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এসময় হরতাল সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের একটি মিছিল ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় মিছিল থেকে শিমুলের ওপর হামলা চালানো হয়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এ অবস্থায় শিমুলকে উদ্ধার করে পাশের হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

ঢাকায় পিকেটারদের উপস্থিতি অনেক কম হলেও তেজগাঁও, নাবিস্কো, মহাখালীসহ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল আর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। গাবতলীতে বিআরটিসি ডিপোতে অšত্মত ৬টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হলে ২টি বাস সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। যাত্রাবাড়িতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শনির আখরায় বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গাজীপুরের চামুড্যা এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেয়া হয়।

এছাড়া আশুলিয়ায় কবিরপুর ও নরসিংহপুওে বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। হরিশংকর এলাকায় ১০টি বাস ভাংচুর করা হয়। নাটোরে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। রাজধানীর সাত রা¯ত্মায় যুবদলের মিছিলে পুলিশ ধাওয়া করে। নাবিস্কো ও ফকিরাপুলে ছাত্রদল মিছিল করেছে। টঙ্গীতে মিছিলে বাধা দেয়ার পর পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশ সরে যায়। শানিনগরে স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল করেছে। ধানমন্ডিতে ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই হরতালের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, শনিবারের মধ্যে যদি নির্দলীয় সরকারের যদি প্রশ্নে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া না হয়, তাহলে রোববার থেকে হরতাল করা হবে।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রীকে টেলিফোন করে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কিন্তু বিরোধী জোট তাদের হরতাল কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে।

এদিকে হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সারাদেশে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। রাজধানীর বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়েছে। দুই মন্ত্রী, বিচারপতি এবং সিইসির বাসবভনের সামনে ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। শনিবার সকাল থেকে কিছুক্ষণ পর পর বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চলে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের সমর্থনে রোববার ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ৭/৮টি ককেটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে আবাহনী মাঠের কোণায় এ ঘটনা ঘটে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার ভোরে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের কোনায় ১০/১৫ পিকেটার হঠাৎ এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এর আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ ঘটানস্থলে পৌঁছায়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের সমর্থনে ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পৃথক স্থানে ৫টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে পিকেটাররা। এসময় পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে বলে যানা গেছে। রোববার ভোর ৬টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভোর ৬টায় আশুলিয়ার কবিরপুর এলাকায় সেলিম পরিবহনের দূর পাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৩৩৮৯) ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থক পিকেটাররা। একই সময়ে আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে, আশুলিয়া বাজারে একটি লেগুনা ও সরকার মার্কেট এলাকার নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে আরও একটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে (ঢাকা মেট্রো-১১-২৭৯৮) আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী নগরের কাজলা এলাকায় বিকেলে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৫ জনকে আটক করেছে।

হরতালের আগের দিনও ঢাকায় ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন পিকেটারকে। এছাড়া বিচারপতি, মন্ত্রী, সিইসির বাসভবন, টিভি কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল ও বোমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চেক পয়েন্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। নাশকতা এড়াতে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো।