শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ‘স্বার্থপর’ জিনের প্রভাবেই যৌন মিলন!

‘স্বার্থপর’ জিনের প্রভাবেই যৌন মিলন!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ যৌন প্রজননের প্রক্রিয়া প্রাণীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই। তারও অনেক পরে এর মাধ্যমে পরিতৃপ্তি লাভের সূচনা হয়। তাহলে প্রথম দিকে এর কি কারণ ছিল? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে ‘স্বার্থপর জিন’ এর হাত আছে!

প্রসেডিং অফ দ্য রয়াল সোসাইটি বি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশ হয় নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড এর বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা এবং এখানেই তারা মত প্রকাশ করেন যে ‘স্বার্থপর জিন’গুলো প্রাণীদেরকে মিলনে উৎসাহিত করে যাতে এরা অন্য জিনকে প্রভাবিত করতে পারে। স্বার্থপর বা পরজীবী জিন হল সেইগুলো যারা মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র মানে না। মানে অনেকটা ভুতের মত এরা মানুষের ওপরে চেপে বসে থাকে এবং মানুষকে প্রভাবিত করে।

সহজভাবে বলা যায়, পিতামাতা উভয়ের শরীর থেকে জিন সন্তানের শরীরে আসার সময় দুই ভাগ হয়ে যায় এবং এই দুই অর্ধাংশ একত্র হয়ে সন্তানের জেনেটিক গঠন তৈরি করে। এই ভাগ হবার সময় কিছু জিন বাদ পড়ে যায়। কিন্তু “স্বার্থপর” জিন গুলো এভাবে ভাগ হয় না। বাবামায়ের শরীরে এই জিন থাকা মানে সন্তানের শরীরে এটা থাকবেই থাকবে। আর তাছাড়া এই জিনগুলো মানুষের শরীরে কোনও উপকারও করে না। এ কারণেই এদেরকে বলা হয় স্বার্থপর।

স্বার্থপর জিন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে গবেষকরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। কিন্তু এসব জিন বাহকের শরীরে কি ভূমিকা রাখে তা অজানা রয়ে গেছে। তা জানতেই এই নতুন গবেষণা যা পরিচালিত হয় ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড এর পলিনা জিরাল্ডো-পেরেজ এবং ম্যাথিউ আর গডার্ড এর দ্বারা।

নিউজিল্যান্ডের এই গবেষকরা ধারণা করেন যে স্বার্থপর জিনগুলো শুধুমাত্র যৌন প্রজননের মাধ্যমেই ছড়াতে পারে। মানুষের শরীরে এই জিন থাকে তবে যত বেশি মানুষের সাথে তিনি মিলিত হবেন তত বেশি পরিমাণে এই জিন ছড়ানোর সুযোগ পাবে। আর মানুষ যদি মিলনে আনন্দ পায় তবে তিনি অবশ্যই বেশি পরিমাণে এবং বেশি মানুষের সাথে মিলিত হতে চাইবেন। এ থেকেই ধারণা করা যায়, মানুষের যৌন প্রজননে যে আনন্দ লাভের প্রক্রিয়া তার পেছনে এই স্বার্থপর জিনের হাত আছে।

তারা গবেষণা করেন ইস্টের একটা প্রজাতি, ঝধপপযধৎড়সুপবং পবৎবারংরধব তে উপস্থিত হোমিং এন্ডোনিউক্লিয়েজ জিন (ঐঊএং) নিয়ে। ইস্টের এই প্রজাতি প্রাচীন কাল থেকে রুটি বেক করতে এবং অ্যালকোহল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, এই ঐঊএ গুলো অন্যান্য জিনের চাইতে অনেক দ্রুত ছড়ায়। এদের এভাবে ছড়ানোর প্রক্রিয়ার নাম হল “হোমিং”।

মেন্ডেলের সূত্র অনুযায়ী কোনও পিতা বা মাতার শরীর থেকে একটি জিন পরবর্তী প্রজন্মে পরিবাহিত হবার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ। কিন্তু এক ধরণের ঐঊএ জিন এর মাঝে দেখা যায়, এটি পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে পরিবাহিত হয়ে থাকে ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ। গবেষণা থেকে আরও দেখা যায় অণুজীব এবং পোকামাকড়ের মাঝে এরা খুব দ্রুত ছড়ায়। নতুন এই গবেষণায় নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা প্রথমেই প্রমাণ করেন যে এই ঐঊএ জিনগুলো স্বার্থপর জিনের আওতায় পড়ে। এরপর তারা বাহকের যৌন আচরণের ওপরে এদের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। “যেহেতু সব স্বার্থপর জিন বিস্তারের জন্য যৌন প্রজননের ওপর নির্ভরশীল, তাই তাদের বাহকের যৌন প্রজননের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাদেরই সুবিধা”, বলে মত প্রকাশ করেন গবেষকরা।

এই গবেষণা থেকে যা তথ্য পাওয়া যায় তাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাহকের যৌন প্রবৃত্তি বৃদ্ধি ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই স্বার্থপর জিন প্রভাব রাখে। অন্যদের সাথে মিলিত হবার জন্য যত উৎসাহী হব আমরা, ততই এই জিনের সুবিধে। তাই যৌন মিলনে আনন্দের প্রক্রিয়া সম্ভবত এসব জিনের প্রভাবেই এসেছে।