স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐতিহাসিক ১০ই জানুয়ারি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ১০ মাস পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। লাখো বাঙালি উৎসবের আনন্দে এদিন প্রিয় নেতাকে বরণ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য গভীর রাতে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ওই রাতেই তারা নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালায়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসতে বলা হয়। তা না হলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু বাঙালির অধিকার ছাড়া তিনি কোন কিছু মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের নির্জন-অন্ধকার কারাগারে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিচার। এতে তার ফাঁসির আদেশ হয়। কারাগারের যে সেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবরও খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি ও প্রহসনের বিচার বন্ধ করতে প্রবল বিশ্ব জনমতের চাপের মুখে স্বৈরাচার পাকিস্তানি সরকার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে সাহস পায়নি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান সরকার সদ্য ভূমিষ্ঠ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ই জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। এ সময় অস্থায়ী সরকার, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাসহ লাখো মানুষ বিমানবন্দরে পুষ্পবৃষ্টিতে বরণ করে নেয় প্রিয় এই নেতাকে। বঙ্গবন্ধুও তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি নিজেই তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ছয়টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। বেলা ২টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে জনসভা।
এতে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে সংগঠনের সকল শাখাকে ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সকল শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।