সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > স্বর্ণ আটকের স্বর্ণযুগ

স্বর্ণ আটকের স্বর্ণযুগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ স্বর্ণ আটকের ‘স্বর্ণযুগ’ ছিল গত বছর! এ বছরেই বিদেশ থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা স্বর্ণ আটকের রেকর্ড হয়েছিল। গেল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শুধু বিমানবন্দর নিয়েই স্বর্ণ আটক করা হয়েছিল ৫৬৫ কেজি ৭৫ গ্রাম। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণই ২৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক গোপন প্রতিবেদনে এ হিসাব দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর মোট পাঁচ বছরে কত স্বর্ণ আটক করা হয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এই পাঁচ বছরে স্বর্ণ আটক করা হয়েছে মোট ৫৭৭ কেজি ১৭ গ্রাম। টাকার অঙ্কে স্বর্ণের দাম দেয়া হয়েছে ২৬০ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্বর্ণ আটকের পরিমাণ দেখানো হয়েছে চার কেজি ৩০ গ্রাম। স্বর্ণের দাম এক কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে আটক হয় শূন্য দশমিক ৩৫ কেজি, মূল্য শূন্য দশমিক ১১ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের স্বর্ণ আটক এক দশমিক ২১ কেজি, মূল্য শূন্য দশমিক ৫১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আটক ৫ দশমিক ৫৬ কেজি, দাম ২ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা। আগেই বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্বর্ণ আটকের পরিমাণ ছিল ৫৬৫ দশমিক ৭৫ কেজি এবং দাম ২৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পরিসংখ্যানে গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধারের মাসওয়ারি চিত্রও দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সব চেয়ে বেশি স্বর্ণ আটকের ঘটনা ঘটে। এই এক মাসে মোট ১৫৯ দশমিক শূন্য ৯ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর আগের মাস মার্চে আটক হয়েছিল ১১৪ দশমিক ৮৩ কেজি স্বর্ণ, যার দাম ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
২০১৩ সালের জুলাইতে স্বর্ণ আটক হয় ৩৪ দশমিক ৩৫ কেজি। দাম ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগস্টে ২৬ দশমিক ২৮ কেজি, মূল্য ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে ১৩ দশমিক ৯৩ কেজি, মূল্য ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অক্টোবরে ৪ দশমিক ৫০ কেজি, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। নভেম্বরে ৪০ দশমিক ৭৩ কেজি, ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে ৩১ দশমিক ৭৫ কেজি, ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে স্বর্ণ আটক হয় ৬ দশমিক ২৭ কেজি, আট কোটি ২১ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৮৮ দশমিক ৭৭ কেজি, ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মে মাসে ২২ দশমিক ১২ কেজি, ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং জুন মাসে আটক করা হয় ২৩ দশমিক শূন্য ৯ কেজি, দাম ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
গত অর্থবছর, বিশেষ করে চলতি বছরে মার্চ-এপ্রিল মাসে হঠাৎ করে স্বর্ণ আটকের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, গেল বছরের শেষ দিকে ভারতের কংগ্রেস সরকার সে দেশে স্বর্ণ আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য এর ওপর বর্ধিত হারে আমদানি শুল্ক ধার্য করে। ফলে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের নিরাপদ রুট হিসেবে বিবেচিত হয় বাংলাদেশ হজরত শাহজালাল(রহ:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখান দিয়ে প্রচুর পরিমাণ এ দেশে প্রবেশ করে এবং এতে করে স্বর্ণ আটকের ঘটনাও বহু গুণে বেড়ে যায়। ভারতে প্রতিবছর ২০০ থেকে আড়াই শ’ টন স্বর্ণ অবৈধভাবে প্রবেশ করে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি ভরি স্বর্ণ আমদানি শুল্ক ছিল মাত্র দেড় শ’ টাকা। স্বর্ণ আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য চলতি বাজেটে এই শুল্ক বাড়িয়ে করা হয়েছে ভরিপ্রতি তিন হাজার টাকা। শতকরা হিসাবে ২০ গুণ শুল্ক বাড়ানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর স্বর্ণ আটকের ঘটনা অনেকটা ‘টিপস অব আইসবার্গ’ বলা যেতে পারে, যা আটক হয় তার প্রায় দ্বিগুণ বিভিন্নভাবে দেশের ভেতরে ঢুুকে যায়। আর এই স্বর্ণের বেশির ভাগের গন্তব্য হয় ভারতে।