বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ টানা অবরোধে দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। স্থলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দরে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। আর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
গত ২৬ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি চলছে। চলবে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত। মাঝখানে কেবল দুটি শুক্রবার অবরোধের আওতামুক্ত ছিল।
ছয় দিন অবরোধের পর গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পণ্যবাহী কিছু ট্রাক বন্দর ছেড়ে গেলেও তাতে পণ্যজট কাটেনি। এখনকার অবরোধে আবারও পণ্যজট শুরু হয়েছে। আটকে থাকা পণ্যের বড় অংশই পোশাকশিল্পের কাপড়, সুতা ও তুলা, অন্যান্য শিল্পের রাসায়নিক এবং পচনশীল পণ্য।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে স্থলবন্দরে পণ্য আনতে ট্রাক যেতে পারছে না। ফলে পণ্য খালাস হচ্ছে অনেক কম। তবে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। অবরোধের কারণে বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বের হতে পারছে না। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহযোগিতায় বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত কিছু পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ বন্দরে গতকাল বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৫০০ এবং ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যবোঝাই ৩০০ ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের ৪২টি শেড ও কয়েকটি ইয়ার্ডে চাল, ডাল, সুতা, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, খুচরা যন্ত্রাংশে বোঝাই হয়ে আছে। সীমান্তের ভারতীয় অংশে পেট্রাপোল বন্দরেও অনেক পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তারা।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম-কমিশনার ফাইজুর রহমান বলেন, বন্দরে যে পণ্য আটকে আছে তার মধ্যে ১২৫টি ট্রাকে পোশাকশিল্পের কাপড় ও তুলা, ৩০টিতে চাল-ডাল-তেল-কসমেটিকস পণ্য, ১৫টিতে পচনশীল পণ্য ও অন্যান্য শিল্পের রাসায়নিক, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ রয়েছে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হলেও এখন আসছে ১০ থেকে ২০ ট্রাক।
বেনাপোল বন্দরে তীব্র ট্রাকসংকটও দেখা দিয়েছে। যেসব ট্রাকমালিক ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় ট্রাক নামাচ্ছেন, তাঁরা ভাড়া নিচ্ছেন স্বাভাবিক সময়ের তিন গুণ। সে কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া আমদানিকারকেরা পণ্য ছাড় করাচ্ছেন না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গতকাল আমদানি পণ্যবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। পাঁচ দিন ধরে বন্দরে ৪৫টি আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। ওপারে ভারতের মহদিপুর বন্দরেও ৬০০ ট্রাক আটকে আছে। ওইসব ট্রাকের মধ্যে ৬০-৭০টিতে পেঁয়াজ এবং ১৫-২০টিতে আছে ফল।
সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৫ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় কেবল গত শুক্রবার ভারত থেকে ৪৮৫ ট্রাক পণ্য আমদানি করা হয়।
ভোমরা বন্দর এলাকায় ভারত থেকে আমদানি হওয়া ৩০-৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক গতকাল আটকে ছিল। আর ভোমরার ওপারে ভারতের ঘোঝাডাঙ্গা বন্দর এলাকায় বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে এক হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। ভোমরা বন্দর দিয়ে চাল, গম, পেঁয়াজ, পাথর, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে গতকাল ভারত ও ভুটানে রপ্তানির জন্য ৭০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছয় দিন ধরেই এগুলো এখানে পড়ে আছে। ওপারে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে ১০০টির মতো ট্রাক আটকে আছে।
আমদানিকারক ছায়েদুজ্জামান জানান, অবরোধের কারণে বন্দরে আমদানি হওয়া পণ্য বন্দরে খালাস করা হলেও পণ্য পরিবহনের জন্য দূরপাল্লার ট্রাক না পাওয়ায় এসব পণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অবরোধে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দরের উভয় পাশে গতকালও শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে ছিল। এই বন্দর দিয়ে নেপালে তৈরি পোশাক, কোমল পানীয়, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, ওষুধ, বিস্কুট-চানাচুর রপ্তানি হয়ে থাকে।
পঞ্চগড় আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান খান বলেন, টানা অবরোধের কারণে ওপারের ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে এসে ভারতীয় আপেলবোঝাই দুটি ট্রাক ফেরত গেছে।
অবরোধে সিলেট বিভাগের ১১টি শুল্ক স্টেশনের অবস্থাও বেশ নাজুক। শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, শীতকালে সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলো দিয়ে প্রচুর পরিমাণে কয়লা আমদানি হয়ে থাকে। এসব কয়লার একটি বড় অংশই সারা দেশের ইটভাটায় পোড়ানোর কাজে ব্যবহূত হয়। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না।