সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > স্ত্রীর কারণে দুদকের মামলায় জড়াচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী

স্ত্রীর কারণে দুদকের মামলায় জড়াচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের ‘দালিলিক প্রমাণ’ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটির দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে প্রায় দেড়শ‘ কোটি টাকার সরকারি জমি অভিনব পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম সমিতিকে মাত্র ১ কোটি ১ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন তিনি। যে সমিতির সভাপতি ছিলেন তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী।

সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এ জমি ইজারা দিয়েছিলেন তখনকার হেভিওয়েট এ মন্ত্রী। ক্ষমতার অপব্যবহার দুদক আইনের তফসিলভুক্ত একটি অপরাধ। এমন অপরাধের সত্যতা পাওয়ায় দুদকের মামলায় জড়াতে হবে কারাবন্দি সাবেক এ মন্ত্রীকে। অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র এমনটাই জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।

সূত্রটি জানায়, অভিযোগের বিষয়ে শিগগিরই কারাবিধি মেনে তার বক্তব্য নেবে দুদক। তবে বক্তব্য নিলেও অভিযোগ থেকে অব্যহতির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে কথা বলা যাবে না’ বলে জানান তিনি।

তবে দুদকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ পর্য্যন্ত দুদকের অনুসন্ধানে তার (আবদুল লতিফ সিদ্দিকী) বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। মন্ত্রিত্ব থাকাকালে তিনি একটি সমিতিকে তার মন্ত্রণালয়ের জমি পানির দরে ইজারা দিয়েছেন। যে সমিতির সভাপতি ছিলেন তার স্ত্রী।’

মন্ত্রী থাকাকালে যে পদ্ধতিতে তিনি চট্টগ্রাম সমিতিকে পানির দরে ইজারা দিয়েছেন তা দুর্নীতির রূপকথাকেও হার মানিয়েছে! কেবলমাত্র স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী ওই সমিতির সভাপতি থাকায় বড় ধরনের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পানির দরে সরকারি সম্পদ চট্টগ্রাম সমিতিকে ইজারা দেন লতিফ সিদ্দিকী। জায়গাটির অবস্থান মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনে।

দুদকের অনুসন্ধান টেবিলে থাকা নথিতে দেখা যায়, ২০০৮ সালের মহাজোট সরকারের আমলে লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময়ে ২০১৩ সালে ক্ষমতা ছাড়ার চার দিন আগে এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ঢাকার মতিঝিলে চট্টগ্রাম সমিতিকে জমি ইজারা দেন।

(জমিটির অবস্থান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল মৌজার হোল্ডিং নম্বর ১৭৬, আরএস দাগ নম্বর ২৪৫৮, ঢাকা সিটি জরিপের দাগ নম্বর ৩৩৩৯-এর অন্তর্ভুক্ত ১১ কাঠা ১৩ ছটাক)

২০১৩ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম সমিতি হাসপাতাল বানানোর কথা বলে এ জমির জন্য আবেদন করে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগে (২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর) তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী তাতে সম্মতি দেন।

পরদিন ২১ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলরতন সরকার চট্টগ্রাম সমিতির তখনকার সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাককে একটি চিঠি দিয়ে জমিটি ইজারা দেয়ার কথা জানান। ইজারা মূল্য প্রতি বছর ১ লাখ ১ হাজার ১০১ টাকা হিসেবে ৯৯ বছরের জন্য ১ কোটি ১ লাখ ১ হাজার ১০১ টাকা নির্ধারণ করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

দলিলে দেখা যায়, জমিদাতা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফণীভূষণ চৌধুরী দাতা এবং গ্রহীতা চট্টগ্রাম সমিতির পক্ষে এর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি লায়লা সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন খান এবং ট্রাস্ট সেক্রেটারি এম এমদাদুল ইসলাম।

জমিটি ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার আড়াই মাস পর চট্টগ্রাম সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হয়। এতে ২০১৪-১৫ সালের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন লায়লা সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন খান।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার শপথ নেয়। তার তিন দিনের মাথায় ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সমিতিকে জমির ইজারা দলিল করে দেয় মন্ত্রণালয়।

ওই জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী নোটশিটে লিখেছেন- ‘ব্যক্তিগত জীবনে আমি চট্টলা কন্যার পাণি গ্রহণ করেছি। মানবতার সেবায় তাদের সহযোগিতা করার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে এটা করছি’।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, এই প্লটটি বিক্রির কোনো এখতিয়ার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেই। এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর লিখিত নির্দেশে ওই ইজারা দেয়া হয়। যা ক্ষমতার অপব্যবহার।

সূত্রটি আরও জানায়, এতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শর্তও মানা হয়নি। এই জমিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অবমুক্ত করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অবমুক্ত করার ক্ষেত্রে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দু’টি শর্ত দেয়। তা হলো প্লটটি কখনো বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাবে না এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে এটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জমিটি বরাদ্দের সময় এর কোনোটিই মানা হয়নি।

জানা গেছে, নিয়মবহির্ভূত চট্টগ্রাম সমিতিকে ইজারা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনও জমির দখল নিতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, হজ নিয়ে বিরুপ মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ দুই-ই হারিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সেই সঙ্গে বহিষ্কৃত হয়েছেন দল থেকেও। ২০১৪ সালে মহাজোট পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এর আগের মেয়াদে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসে এক অনুষ্ঠানে হজকে কটাক্ষ করায় ৭৭ বছর বয়সী হেভিওয়েট মন্ত্রীর শেষ পর্য্যন্ত স্থান হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি রয়েছেন তিনি। বাংলানিউজটোযেন্টিফোর.কম