রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > সৌদি-কাতার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন > বাংলাদেশ যে সব সমস্যার সম্মুখীন হবে

সৌদি-কাতার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন > বাংলাদেশ যে সব সমস্যার সম্মুখীন হবে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
দেশে ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয় প্রেরণ। বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য বিদেশী শ্রমবাজারের সম্প্রসারণও সেভাবে হচ্ছে না। এর মধ্যেও ব্যতিক্রম কাতার। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন, তার বড় অংশের গন্তব্যই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্নতা শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে দেশটির অর্থনীতিকে। এর প্রভাব পড়তে পারে দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ওপর। কাতারকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট দীর্ঘ হলে জনশক্তি রফতানির পাশাপাশি আরো সংকুচিত হতে পারে ক্রমহ্রাসমান রেমিট্যান্সপ্রবাহ। একইভাবে ধাক্কা সামলাতে হবে আকাশসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।

সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি দেশ গত সোমবারই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশও পরে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। বিশ্লেষকরা একে দেখছেন কাতারের অর্থনীতির ওপর বড় আঘাত হিসেবে। তারা বলছেন, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশটির অর্থনীতি, বিশেষ করে নির্মাণ খাত। বাংলাদেশী শ্রমিকদের অধিকাংশ কাতারের নির্মাণ খাতের সঙ্গে যুক্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে তাদের ওপর।

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে বহু নির্মাণকাজ হচ্ছে কাতারে। এর বেশির ভাগই কাতারের নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। ফলে এসব প্রকল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকায় বাংলাদেশী শ্রমিক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের যেসব বিনিয়োগ কাতারে রয়েছে, সেগুলোয় প্রভাব পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা কিছুটা ক্ষতির মুখে হয়তো পড়বেন। তবে আমরা মনে করছি, কাতারের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর যে কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, অচিরেই তা সমাধান হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব হলেও কাতার রয়েছে তৃতীয় স্থানে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী শ্রমিকের ২২ শতাংশের গন্তব্য ছিল কাতার। ২০১৬ সালে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে কাতারেই গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন। এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অর্ধদক্ষ কর্মীর পাশাপাশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, ব্যাংকার ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞের মতো আরো পেশাজীবী নেয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি।

দুই বছর ধরেই দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। এ মন্দার মধ্যেও কাতার থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর কাতার প্রবাসীরা ৩১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালেও ২০১৫-১৬ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে।

পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে ২০১৬ সালে দেশে মোট রেমিট্যান্সপ্রবাহ ছিল ১ হাজার ৩৬০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে কাতার থেকে আসে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের বেশি; ওই বছর প্রবাসীদের পাঠানো মোট আয়ের যা ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে মোট রেমিট্যান্সের সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি এসেছে কাতার থেকে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি-মে সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স। এর মধ্যে কাতার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৪ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

সন্ত্রাসবাদে ম“ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পাশাপাশি আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরবসহ সাতটি দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে কাতারগামী যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে ওইসব দেশের এয়ারলাইনসগুলো।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে কাতারের যাত্রী সবচেয়ে বেশি পরিবহন করে আটটি এয়ারলাইনস। এর মধ্যে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার অ্যারাবিয়া এরই মধ্যে কাতারে তাদের সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে। এ কারণে ঢাকা থেকে কাতারগামী কোনো টিকিটও বিক্রি করছে না তারা। আগে থেকে এ রুটের টিকিট কিনে রাখা যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।

অন্যদিকে ঢাকা-দোহা রুটে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট আগের সূচিতে চললেও ঢাকা থেকে দোহায় ট্রানজিট নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য টিকিট কেনা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। এসব যাত্রীকে আবার নতুন করে অন্য এয়ারলাইনসের টিকিট কাটতে হচ্ছে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ঢাকা-দোহা রুটে সরাসরি ফ্লাইট আগের সূচি অনুযায়ী চলছে। হঠাৎ পাঁচটি এয়ারলাইনস কাতারগামী যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে চালু থাকা এয়ারলাইনসগুলোর ওপর।

আবুধাবিভিত্তিক ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক (হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) আল মাহমুদ শামীম জানান, ইতিহাদের যেসব ফ্লাইট কাতারের দোহায় যাবে, সেগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীদেরও বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তবে দোহাগামী যাত্রীরা চাইলে এখন বিমানকে বেছে নিতে পারেন বলে জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে কয়েকটি এয়ারলাইনস কাতারগামী যাত্রীদের নিতে অনীহা প্রকাশ করায় তাদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি কাতার এয়ারওয়েজের টিকিট কেনা যাত্রীরাও ভোগান্তির বাইরে নন। কাতারে ট্রানজিট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য গন্তব্যে যেতে চাওয়া যাত্রীদের আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে।

বণিক বার্তা থেকে নেয়া