শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সুবাস্তু নজরভ্যালিতে নাইট পার্টি বসাতেন পারুল

সুবাস্তু নজরভ্যালিতে নাইট পার্টি বসাতেন পারুল

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পী নামে পরিচিত হলেও নাইট পার্টি থেকে আয় ছিলো পারুলের আয়ের প্রধান উৎস্য। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে ইয়াবা, বিয়ার ও বিদেশি মদসহ বিটিভির তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী পারুল ও পরিবারের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।ভাড়া করা ফ্ল্যাটে নাচ-গানের আসর বসাতেন কণ্ঠশিল্পী পারুল। হাই ভলিউম মিউজিকে সারারাত যেমন নাচ চলতো, তেমনি চলতো মাদক সেবন। অতিথিদের তালিকায় থাকতেন ভিআইপি, মডেলরা। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তেমন পরিচিত না থাকলেও এই কারবারই টাকা আয়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন পারুল মাহবুব।

সুবাস্তু নজরভ্যালি জনাকীর্ণ স্থানে হলেও ১০ তলার ওই ফ্ল্যাট ছিল অনেকটাই নিরাপদ। গত প্রায় ৫/৬ মাস ধরে ওই বাড়িতে এ কারবার চলে আসছিল।

পারুলকে আটকের পর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানান। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও এ সব কথা জানান।

কর্মকর্তারা বলেন, ‘বর্তমানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উঠতি বয়সী অনেক মডেল ও অভিনেত্রী মাদক সেবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের আমরা গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রেখেছি।’

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা একেএম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি, রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান নিজ মেয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন।

পরবর্তীতে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আমরাও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দিই। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, কণ্ঠশিল্পী পারুল মাহবুব নিজ বাসায় পার্টি দিয়ে নাচ, গান ও মদের আসর বসান। তার এই বাসায় আসা-যাওয়া করেন বার ও গেস্টহাউজে যেতে চান না এমন সব ভিআইপি ও মডেলরা।’

তিনি বলেন, ‘এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় ভিআইপি গেস্ট পাওয়া না গেলেও তাসলিমা ইসলাম এলিজা নামে একজন ডান্সারসহ পারুল মাহবুব, তার স্বামী মাহাবুবুল আলম খান ও তার বোন শিউলি আক্তারকে আটক করা হয়।’

মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, আটকদের সবাই মাদকাসক্ত এবং অভিযানের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা মাদক সেবন করছিলেন। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পারুল ততটা পরিচিত না হলেও পার্টি দিয়ে টাকা কামানো ছিল তার প্রধান কারবার।

তিনি আরো জানান, বিশাল আয়তনের এই ফ্ল্যাটের একটি রুমে নাচ-গানের জন্য ব্যবহার করা হতো। সেখানে ছিল ইয়াবা, মদ ও বিয়ার। যারা যে মাদকে অভ্যস্ত, তারা সেগুলো গ্রহণ করতেন, আর হাই ভলিউমে মিউজিক বাজিয়ে নাচের তালে তালে অতিথিদের মাতিয়ে রাখতেন ডান্সাররা।

গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাংস্কৃতিক জগতের নতুন নতুন অনেক শিল্পী মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হবে।

এদিকে, সরেজমিন দেখা যায়, সুবাস্তু নজরভ্যালির বি-১ টাওয়ারের ১০ তলার এফ-১ ফ্ল্যাটে থাকতেন পারুল মাহবুব, তার স্বামী মাহাবুবুল আলম খান ও বোন শিউলি আক্তার। তিন রুমের ওই বাসা গত প্রায় ৫/৬ মাস আগে তারা ভাড়া নেন।

ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার ও লিফটম্যানরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিনের বেশির ভাগ সময় ম্যাডাম (পারুল) বাসায় থাকতেন। আর রাত ১০টার পর থেকে ওই বাসাতে লোকজন আসা-যাওয়া করতেন। কখনো রাত ২/৩টা আবার কখনো ভোরে তারা চলে যেতেন।

তারা জানান, রাত গভীর হওয়ার কারণে অনেকের যাতায়াত কিংবা লিফট চালু না থাকলে তাদের ডাকা হতো। লিফট চালু করে অতিথিদের যাতায়াতে সহায়তা করলে বকশিসও পাওয়া যেতো।

পাশের ফ্ল্যাটের কয়েক জন জানান, গত ৪/৫ মাস ধরে প্রায় প্রতিরাতে এখানে পার্টি হতো। উচ্চস্বরে গানের আওয়াজও পেতেন তারা। আর সেখানে উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন, বিভিন্ন মডেল ও অভিনয় শিল্পীরা আসা যাওয়া করতেন।

অন্যদিকে, রোববার বিকেলে আটকদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে (নম্বর ১০)। মামলাটি দায়ের করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক একেএম কামরুল ইসলাম। তিনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও ইয়াবাসহ সাংস্কৃতিক জগতের মডেল, অভিনেত্রীরা র‌্যাব, পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার নজির রয়েছে। সর্বশেষ, কণ্ঠশিল্পী পারুলকে আটক করলো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।