শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে নামবে বাংলাদেশ-ভারত

সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে নামবে বাংলাদেশ-ভারত

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে এবার যৌথ অভিযানে নামছে বাংলাদেশ ও ভারত। সীমান্তে মাদকের আগ্রাসন বন্ধে বরাবরই ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার ভারতও মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে যৌথ অভিযানের জন্য সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে রেড এলার্ট জারি, দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়, মাদক কারখানা ধ্বংসকরণ, প্রশিণ কার্যক্রম, যৌথ কমিটি গঠন এবং যৌথ পরিদর্শন পদ্ধতি চালুর মত কিছু কার্যকর পদপে গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। উভয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সীমান্তরী বাহিনী প্রধান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো বা অধিদফতর-প্রধান পর্যায়ে একাধিক বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা এসেছে। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালকের ভারত সফরকালে কয়েকটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের ডিএনসির প থেকে দেয়া কিছু প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে ইতিবাচক পদপে নেয়া হয়েছে। ১৪১ মাদক ব্যবসায়ীর একটি তালিকা ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তালিকা বিনিময় ও চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ভারত সীমান্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। বন্ধ হয়নি চোরাচালান, ফেনসিডিলের কারখানা। গ্রেফতার করা যায়নি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী চক্রকে। যৌথ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে সীমান্তে মাদকের আগ্রাসন অনেকাংশে কমে আসবে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণে দুই দেশেরই স্বদিচ্ছা প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাকি আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা শিগগির মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে যৌথ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। ভারতও সহযোগিতার ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালনাগাদ তালিকা নিয়ে ভারতের সীমান্তরী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে গত পাঁচ বছর কয়েক দফা বৈঠক করেছে ডিএনসি ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একের পর এক উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। গত বছর মার্চে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বৃহত্তর যশোর সীমান্তের ৫২টি, উত্তরাঞ্চলের ছয়টি জেলার ৭২ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৭০টি ফেনসিডিল ও ১০টি হেরোইন তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার তালিকা বিএসএফের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই বৈঠকে বিজিবির প থেকে কারখানাগুলো দ্রুত বন্ধ করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধও জানানো হয়। এর পরিপ্রেেিত মাত্র ১২টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে বলে তথ্য আছে বাংলাদেশের কাছে। অন্যান্য ফেনসিডিল কারখানা বন্ধের ব্যাপারে যথাযথ সাড়া মেলেনি বিএসএফের প থেকে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন্স (জেআরডি) স্বার হয়। ওই সময় সীমান্তে কারখানাগুলো বন্ধ না হওয়ার কারণে মাদকের কুফল ও সার্বিক বিষয় তুলে ধরে একটি প্রতিবেদনও ধরিয়ে দেয়া হয় বিএসএফকে। ওই সময় নতুন স্থাপিত কারখানার তালিকাও দেয়া হয়েছিল।

গত সেপ্টেম্বর মাসে বিএসএফ মহাপরিচালক ইউকে বানসালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেয়। এরপর বাংলাদেশের ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে যায়। দুই দিনব্যাপী দ্বি-পাকি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভারত সীমান্তের এপার-ওপারের ১৪১ জন মাদক ব্যবসায়ীর হালনাগাদ তালিকা ভারতের সংশিষ্ট কর্তৃপরে হাতে তুলে দেয়া হয়। আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে ফেনসিডিলের ৬১টি কারখানার তথ্য এবং উৎপাদিত ফেনসিডিলের নমুনা-লেবেল ওই বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে ভারতের পে সে দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর মহাপরিচালক অজয় চাঁদহা নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা, কারখানা বন্ধ, রুট বন্ধ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়।

সূত্র আরও জানায়, ভারতের সীমান্ত এলাকায় অনেকগুলো ওয়্যার হাউস ও বাড়ি আছে যেখানে বেশি পরিমাণ কোডিন ব্যবহার করে ফেনসিডিল তৈরি করা হয় বাংলাদেশে বিক্রির জন্য। এসব ফেনসিডিল স্বাস্থ্যের জন্য মারাÍক তিকর। এসব ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবার অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত সরকার বৈধভাবে ওষুধ তৈরি জন্য দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন ফেনসিডিলের কাঁচামাল (কোডিন) আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। এসব কাঁচামাল দিয়ে বছরে ৫০ কোটি বোতল ফেনসিডিল উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশ এমন তথ্য দেয়ার পর ভারত সতর্ক হয়ে কাঁচামাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ২০১৩ সালের জন্য ২০ টন কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়।

সূত্র জানায়, মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপরে বৈঠকে দুই দেশ মিলে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই মহাপরিচালক পর্যায়ের তথ্য বিনিময় এবং যৌথ অভিযানের ব্যাপারেও কিছু করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। সীমান্ত এলাকায় তিন মাস পরপর বিএসএফ ও বিজিবির ব্যাটালিয়ান প্রধানদের বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপরে একজন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশে উপ-পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেখানে বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সিদ্ধান্ত হয়, মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পর ল্যাবে পরীার প্রতিবেদন বিনিময় করা হবে। সীমান্তের দুই পাশে একই সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন ও অভিযান চালানো হবে। সেখানে কাস্টমস, জেলা প্রশাসন, সীমান্তরী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপ নিজ দেশের ভূখণ্ডে থেকেই তৎপরতা চালাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় মাদক বাণিজ্য বন্ধে যৌথ অভিযান এবং ডিএনসির নতুন অফিস স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ডিএনসি। সফরের পর কিছু কার্যক্রমের ব্যাপারে নির্দশনাও মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে কূটনৈতিক কারণে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এখন অনেকটা বদলেছে। সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীরা বিএসএফের গুলিতে মারা যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা কখনও মারা গেছে বলে শোনা যায় না। এমন অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। কলকাতাসহ ভারতের পূর্ব সীমান্তের কিছু এলাকায় সে দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপ কয়েকটি আধুনিক অফিস চালু করেছে।

প্রশিণ: সূত্র জানায়, গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণে সমতা বাড়াতে ভারত বাংলাদেশকে দুটি প্রশিণ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।

পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশী ১২ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে ১৫ দিনব্যাপী প্রশিণ নিয়েছেন। ৮ অক্টোবর থেকে ১৫ দিনব্যাপী মাদকের রাসায়নিক বিশেষণ বিষয়ে প্রশিণ নিতে যান আরও ১৮ জন।