সিন্ডিকেটের কবলে ঈদের ছবি

বিনোদন ডেস্ক:

নাটকের পর এবার সিনেমাও চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের দখলে? বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও এমনই অভিযোগ উঠেছে। সিনেমাপাড়ায় কান পেতে এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র তারকা ও নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারের ঈদের সিনেমাও সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। এমনিতেই দেশে এখন নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহ খোলা থাকে মাত্র ৬৬টি। অন্যদিকে আবার ঈদে সিনেমা দেখার জন্য একটা বড়সড় দর্শকমহল আগে থেকেই তৈরি থাকে। আর তাই নির্মাতাদের সবাই দুই ঈদকে টার্গেট করেই বেশির ভাগ সিনেমা মুক্তি দিতে চান। এই মুক্তি দেওয়া নিয়ে প্রযোজকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয় সেই লক্ষ্য থেকেই।

বর্তমানে সিঙ্গেল স্ক্রিন চালু রয়েছে ৪৫টি, ব্লক বাস্টার এবং সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা ২১টি সব মিলিয়ে এই ৬৬টি। তবে ঈদকে ঘিরে আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহ খোলা হয়। প্রেক্ষাগৃহ খোলার আগে ঈদের আমেজ আনতে সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়। কোথাও কোথাও আলোক সাজসজ্জার কাজও করা হয়। তখন সব মিলিয়ে ১২০-৩০টি হল খোলা থাকে। কিন্তু এই ১২০/৩০টি প্রেক্ষাগৃহ তো দুটি সিনেমার জন্যও যথেষ্ট নয়। কারণ, এক শাকিব খানের সিনেমাই পারলে এর সব প্রেক্ষাগৃহই গ্রাস করে ফেলতে চায়। বাকি সিনেমা তখন কোথায় প্রদর্শিত হবে?

এবার অনেক হিসেব-নিকেশ করেই ঈদে মুক্তি পেয়েছে ৫টি সিনেমা।

যেখানে আগের ঈদে মুক্তি পেয়েছিল ৮টি সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহের অপ্রতুলতার জন্য তখন বেশির ভাগ সিনেমাই ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই বিবেচনা থেকে এবার কিছুটা কম করেই সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও সিনেমা প্রযোজকদের তেমন উন্নতি হয়নি। বরং নতুন আরেক অসাধুতার প্রয়োগ দেখা গেছে প্রেক্ষাগৃহগুলো ঘিরে।

এবার ঈদে শাকিব খানের সিনেমা ‘প্রিয়তমা’ ১০৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। গত ঈদে ছিল ১০০টি। এবার ৭টি বেশি প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছে শাকিব খানের সিনেমা। সবমিলিয়ে প্রতিদিন ৪৫০টি প্রদর্শনী হচ্ছে সিনেমাটির। এরপরেই আছে রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমা। তার সিনেমা পেয়েছে ২৮টি প্রেক্ষাগৃহ। সবকটিই সিনেপ্লেক্স। রায়হান রাফীর সিনেমা একটি আলাদা ক্লাস আছে। এটা এখন প্রেক্ষাগৃহের মালিকরাও জানেন ও বোঝেন। তারপরেও তার সিনেমাটি মাত্র ২৮টি প্রেক্ষাগৃহ ধরতে পারল কেন? দেশের সব প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা এখনো শাকিব খানের সিনেমাতেই আটকে আছেন। এ দেশে যে আফরান নিশোরও একটা বড় দর্শকমহল আছে সেটা তো প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের না জানার কথা নয়। সেটা তো প্রমাণও দিয়েছে প্রদর্শিত ২৮ প্রেক্ষাগৃহের দর্শকসংখ্যা।

এতেই বোঝা গেছে দেশের প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা এখনো সেই ৭০-৮০ দশকেই রয়ে গেছেন। তারা ঝুঁকি নিতে জানেন না। ব্যবসা করতে হলে যে ঝুঁকিও নিতে হয় সেটা তারা বোঝেন না। ঝুঁকি নিয়েই নতুন নতুন প্রোডাক্টের বাজার সৃষ্টি করতে হয় এটা তারা বোঝেন না। নতুন নায়ক বা নায়িকা খুঁজে নিতে জানেন না। এমন যদি চলতে থাকে প্রেক্ষাগৃহ টিকবে কেমনে? এক শাকিব খান কি ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের নায়কের চাহিদা পূরণ করতে পারবে?

সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’ সিনেমাটির আওয়াজ অনেক দিন ধরেই চলে আসছিল। কিন্তু একটি বাণিজ্যিক সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও এ সিনেমাটি ১৬টি একক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ১২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অপু বিশ্বাসের ‘লাল শাড়ি’। ৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় চয়নিকা চৌধুরীর ‘প্রহেলিকা’। সব মিলিয়ে ১৭১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এবারের ঈদের সিনেমা। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন অডিটোরিয়াম বা মিলনায়তনকে অস্থায়ীভাবে প্রেক্ষাগৃহে রূপ দেওয়া হয়েছে।

সেখানে প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে আবার একাধিক সিনেমা ভাগাভাগি করে প্রদর্শিত হচ্ছে। আর এখানেই চলছে সিন্ডিকেট কোন সিনেমা কোন সময়সূচিতে প্রদর্শিত হবে।

সাধারণত দেশের ভালো ভালো প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের আগে হল মালিকরা সেই সিনেমার ট্রেইলার, টিজার, পোস্টার ইত্যাদি দেখে সিদ্ধান্ত নেন তার প্রেক্ষাগৃহে কোন সিনেমা প্রদর্শন করবেন বা করবেন না। যেমন, মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের মালিক এবং সাবেক মালিক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সিনেমা মুক্তি দেওয়ার আগে প্রায় সব পরিচালকই আমাকে ফোন দেন তার সিনেমাটি প্রদর্শনের জন্য। তবে আমরা এ নিয়ে নিজেরা বসে ট্রেইলার দেখে পরে সিদ্ধান্ত নিই কোন সিনেমা প্রদর্শন করবো কি করবো না।’

তবে তার আগে পরিচালকরা সিনেমা প্রদর্শক সমিতিতে তাদের সিনেমাগুলো জমা দিয়ে থাকে প্রদর্শনের জন্য। এই প্রদর্শনীর ব্যাপারে প্রতিটিই প্রেক্ষাগৃহের মালিকই স্বাধীন। সেখানে কোনো প্রযোজকের পক্ষে তদবির করে যে কোনো সিনেমা গছিয়ে দেয়ার সুযোগ খুব কমই আছে। সেদিক থেকে নতুন নতুন ভালো সিনেমাসহ নতুন নায়ক-নায়িকা সৃষ্টিতেও এই মালিকদের বিরাট ভূমিকা থাকতে পারে। সেই ভূমিকাটিই যদি তারা না রাখতে পারেন তাহলে তারা এভাবে আর কতদিন এক শাকিব খানকে দিয়ে তাদের প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসা চালিয়ে যাবেন? একদিকে তারাই বলবেন ভালো গল্প না থাকায় দর্শক কমে গেছে আবার ভালো গল্পের সিনেমা পাশ কাটিয়ে সেই একই সেন্টিমেন্টের ছবি প্রদর্শনে নিজেরাও যেমন আটকে থাকবেন দর্শককেও আটকে রাখবেন- এভাবে সিনেমার ব্যবসা কতদিন চলে?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫