বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
সিডনি (অস্ট্রেলিয়া): গত ১৪ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বিকেলে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ (ংুফহবুনবহমধষরবং.পড়স) এর উদ্যোগে সিডনির ইঙ্গেলবার্ন লাইব্রেরি সংলগ্ন হলে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
শুরুতেই ভাষা শহীদদের মহান অবদান ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন হয়।
কাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনাব আব্দুল জলিল বাংলা শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার মাধমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরুর পর ভাষা শহীদদের মহান অবদান ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন হয়।
সেলিমা বেগমের উপস্থাপনায় কিশলয় কচিকাঁচা প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনা করে। রোকছানা বেগম এর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে, গড়ে উঠে ছোট বন্ধুদের নিয়ে এই কিশলয় কচিকাঁচার সাংস্কৃতিক দলটি। এই ছোট বন্ধুরা বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাভিত্তিক নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করে। ছড়া, নাচ ও গানের সঙ্গে কিশলয় পরিবেশিত অনুষ্ঠান এক কথায় ছিল অনবদ্য।
কাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের পরিবেশনায় অস্ট্রেলিয়াতে জন্মানো বাঙালি নতুন প্রজন্ম ঐহিক তারিক, তাহসিন ইসলাম প্রহর, রিয়ানা আহমেদ ও ঈশান তারিক বাংলা বই থেকে বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর সাবলিল কণ্ঠে বর্ণনা দিয়ে, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে এবং বাংলায় তাদের লেখাও উপস্থাপন করে প্রবাসী বাঙালিদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। রুমানা খান অনুষ্ঠানের এই পর্বটি পরিচালনা করেন। এই পর্বে শিশুকিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছিল আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে। অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে উঠা তরুন অরনভ একুশ ও মাতৃভাষা তাৎপর্য বর্ণনা করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, ফেডেরাল এমপি লরি ফারগাসন তার বক্তৃতায় ভাষা শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ভাষা নিয়ে বাঙালিদের সংগ্রাম এর কথা গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃভাষার প্রতি অবহেলার কারণে, অস্ট্রেলিয়াতে ৩৫০থেকে ৫০০ আদিবাসী ভাষা থেকে মাত্র ১৫০টি এখন টিকে আছে।’ এছাড়াও অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের বাংলা ভাষার প্রতি এত ভালবাসা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম্যাককুয়ারি ফিল্ড আসন থেকে নির্বাচিত এমপি অনুলাক চান্টিভং তার বক্তৃতায় কেম্পেলটাউন জেলার স্থানীয় বাঙালিরা যেন একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পারে সেজন্য এশফিল্ড পার্কের মতো কেম্পেলটাউন জেলায়ও একটি শহীদ মিনার নির্মাণের ঘোষণা দেন। বাংলায় লিখতে ও পড়তে জানা শিশু-কিশোরদের হাতে উপহার তুলে দেন। এতে উপস্থিত সবাই একসাথে তালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন দেন। অনুষ্ঠানে সিডনির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল যেন হৃদয়ে বাংলাদেশ। অঙ্কন চিত্রে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার ছবি, বাংলাদেশের পরিচিত গাছ পালা, নদী, নৌকা, গ্রাম্য মাঠ, বাংলাদেশের পতাকা ও শহীদ মিনার। সিডনির বাঙালি মালিকানাধীন আবাসন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লিঙ্কারস ‘খরহশবৎং’ পরিবারের পক্ষ থেকে মিসকাত মাহমুদ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী শিশুদের প্রত্যেককে উপহার তুলে দেন। এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন অনুলাক চান্টিভং, শাহাদাৎ হোসেন, মঞ্জু তালুকদার ও রুমানা খান।
সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ এর পক্ষ থেকে জনাব হামিদ উদ্দিন বর্তমান ও নতুন প্রজন্মের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অত্যন্ত তথ্যবহুল একটি প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরেন।
তারপরই আসেন সিডনির অতি পরিচিত আবৃতিকার রুমানা খান, সুরভী ছন্দা এবং সাইফুর রহমান অপু ও শাহিন শাহনেয়াজ। উপস্থিত সবাই গভীর আগ্রহ সহকারে তাদের আবৃত্তি উপভোগ করেন। এককভাবে গান পরিবেশন করেন ফারিয়া, লামিয়া ও সিমা আহমেদ