শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > সিটি নির্বাচনের দিকে কূটনীতিকদের দৃষ্টি

সিটি নির্বাচনের দিকে কূটনীতিকদের দৃষ্টি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। এ মুহূর্তে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। ঢাকায় কাজ করছেন এমন বিদেশী কূটনীতিকরা মনে করছেন, বিএনপি অংশ নিলে সিটি নির্বাচন হতে পারে রাজনৈতিক পরিস্থিতির গেম চেঞ্জার। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারসংক্রান্ত উপ-কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইগনাসিও এবানেসের সফরকালেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে। স্পেনের সেক্রেটারি অব স্টেট ইগনাসিও এবানেস রোববার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। শুক্রবার ঢাকায় একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদুন শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন এ মুহূর্তে আমরা নজর দিচ্ছি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রতি। বিএনপি অংশ নিলে এ নির্বাচন হতে পারে গেম চেঞ্জার। তিনি বলেন বিএনপির আবদুুল আউয়াল মিন্টু আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দেখুন, কূটনীতিকরা বারবার দুই পক্ষের সঙ্গে দেখা করবে এটা নয়। বরং আমরা বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট আছি।
সংকট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে সরকার ও বিএনপির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। রোববার ঢাকায় আসছেন স্পেনের সেক্রেটারি অব স্টেট। তিনিও কিছু আলোচনা করবেন বলে আশা করছি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের অবস্থা এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেন। বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারসংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এজেন্ডাভুক্ত না থাকলেও ইস্যুটি উঠেছিল এবং এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদুন বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজনের সঙ্গে আমার সহকর্মীর কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ইস্যু কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এটি একটি রুটিন আলোচনা। ফেব্র“য়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সফরের পর এ বিষয়ে আলোচনা করাটা স্বাভাবিক। তিনি বৈঠকে আলোচনার বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্ধারিত সময় পরপর মানবাধিকার উপ-কমিটির বৈঠক হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বিশ্বের ১৫টি প্রভাবশালী দেশ ও ইইউ রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে পৃথক চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা ওই চিঠিতে বাংলাদেশের সংকট নিরসনে সংলাপের প্রতিও জোর দেন। তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওই কূটনৈতিক গ্রুপের প্রতিনিধিরা পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে সংকট নিরসনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তারপর কিছু দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নতুন কোনো জাতীয় নির্বাচন চায় কিনা জানতে চাইলে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদুন বলেন, এটা আমরা চাইতে পারি না। কেননা এটা চাইলে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হবে। আমরা চাই সহিংসতা বন্ধ হোক, মানবাধিকার বজায় থাকুক এবং গণতন্ত্র সামনের দিকে এগিয়ে যাক। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র চাওয়া কোনো অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ নয়। ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি রয়েছে তার মধ্যে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সুরক্ষার বিষয়টি রয়েছে। সেটিই আমরা চাই।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি সেক্রেটারি অব স্টেট ইগনাসিও এবানেস রোববার একদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। সফরকালে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। এছাড়াও, বিএনপি, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে ইতিপূর্বে স্পেনকে সমর্থন দিয়েছিল। ফলে এ বিষয়ে দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে তিনি এই সফরে আসছেন। পাশাপাশি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার সফরকালে আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে স্পেনের আগ্রহ রয়েছে। স্পেনে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশী আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।