শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সিগন্যাল মানে না ট্রাফিক পুলিশ!

সিগন্যাল মানে না ট্রাফিক পুলিশ!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সিগন্যালের সময় পার হয়ে গেছে দুইবার। কিন্তু ট্রাফিকের হাতের লাল সিগন্যাল লাইট সরছে না রাস্তার বাম পাশের লেন থেকে। হরতাল-অবরোধের কারণে অপর পাশে খুব একটা বেশি যানজট চোখেও পড়লো না।

বাসের ভেতর থাকা এক যাত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন, ট্রাফিক পুলিশ বোধ হয় ভুলেই গেছে, এ পাশে যে একটা রাস্তা আছে!

প্রায় ২০ মিনিট পর ছাড়া হলো রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটির সিগন্যাল।

বিজয় সরণি মোড়ের কোন পয়েন্টে কত সেকেন্ড গাড়ি দাঁড়ানোর সিগন্যাল রয়েছে জানতে চাইলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমরা হাত দিয়ে যেভাবে পারি, সিগন্যাল ছাড়ি। কারণ, টাইমিংয়ের সঙ্গে সিগন্যাল ছাড়লে যানজট বাড়ে, কমে না।

মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিজয় সরণীর মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে বাসে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন, রাজধানীতে চলাচল করতে প্রায় প্রতিনিয়তই ট্রাফিকদের অনিয়মের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

তারা বলেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল বাতির সঙ্গে যে টাইমিং সেট করা তার কোনোটাই মানছে না ট্রাফিক পুলিশ। ফলে, যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সব সময়।

পল্টনে ইটিসি বাসের এক যাত্রী সুমন সিগন্যালে আটকে থাকার পর এক সময় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ঢাকার কোনো পয়েন্টের সিগন্যালই মানে না ট্রাফিক পুলিশ। কখনো কখনো নিজেদের ইচ্ছেমতো সিগন্যাল ছেড়ে দিয়ে অন্যদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠতেও দেখা যায় তাদের। তাহলে এত টাকা খরচ করে টাইমিং সিগন্যাল দেওয়ার কী দরকার ছিল!

আবার রাজধানীর বাংলামোটরে দেখা গেল উল্টো চিত্র। সিগন্যাল টাইমিং-এ ২০ সেকেন্ড করে সময় বাঁধা থাকলেও প্রতি ১০ সেকেন্ড পরই শাহবাগ লেনের গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ মো. শফিক।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যে সময় এই সিগন্যাল বাতি সেট করা হয়েছে, সেই সময়ের সঙ্গে রাস্তার যানজট কোনোভাবেই মেলানো সম্ভব নয়। তাই, বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ির অবস্থা দেখে সিগন্যাল ছাড়তে হয়।

মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে সিগন্যালে দাঁড়ানো কনক বাসের চালক উদাহরণ দিয়ে অভিযোগ করেন, ট্রাফিকরা ঠিকমতো সিগন্যাল মানলে এই মোড়ে যানজট থাকবো না। দ্যাহেন, এই রোডটা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সিগন্যালে রাখছে। অথচ সামনের রাস্তা পুরাই ফাঁকা। এমনে সিগন্যাল দিলে তো যানজট লাগবোই।

দুপুরে বনানী মোড়ে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশদের মধ্যেও সিগন্যাল না মানার দৃশ্যই দেখা গেল। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ৩ নম্বর বাসের চালক সেকেন্দার বলেন, আগে হ্যারা (ট্রাফিক পুলিশ) সিঙ্গেল (সিগন্যাল) মানতো। ওহন মানেও না। হের ল্যাইগাই তো যানজট বাড়ছে ওহন।

বনানী মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ সেলিম রেলক্রসিংয়ের দোহাই দিয়ে বলেন, সাধারণত এই মোড়ের সামনে রেলক্রসিং থাকায় সিগন্যাল মানা সম্ভব হয় না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেস প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার মোট ৭০টি পয়েন্টে লাল, সবুজ হলুদ বাতির সঙ্গে যোগ করা হয়েছে টাইমিং সিগন্যাল, যা তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

এ সম্পর্কে কথা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেস প্রকল্পের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। সিগন্যালের এ অনিয়মের জন্য ট্রাফিক পুলিশ ও রাস্তায় চলাচল করা রিকশাগুলোকেই দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, রিকশা চলাচল ও ভিআইপিদের যাতায়াতের কারণে বিভিন্ন সময় রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ ‘টাইমিং সিগন্যাল’ না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো সিগন্যাল ছাড়েন।

তিনি আরো বলেন, সমস্যা সমাধানে এ বছরের (২০১৫) জানুয়ারিতে পুরো শহরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মনিটরিং করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা ছিল। এর ব্যয় ধরা হয়েছে, মোট ৫শ’ কোটি টাকা। কিন্তু, হরতাল-অবরোধের কারণে প্রকল্পের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গেছে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কাছে সিগন্যালের এ অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যানজটের এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে উতরে উঠতে সমাধান চান ঢাকা শহরে যানবাহনে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা।

তবে এ বিষয়ে ডিসি ট্রাফিক (সাউথ) খান মো. রেজওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার রাস্তার অনুপাতে গাড়ি থাকার কথা তিনলাখ। সেখানে প্রতিদিন নগরীতে গাড়ি চলাচল করে ১৪ লাখ।

তিনি বলেন, এ ছাড়া তো ভিআইপিদের আসা-যাওয়া আছেই। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ট্রাফিক পুলিশদের ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা সম্ভব হয় না।

ডিসি ট্রাফিক (সাউথ) বলেন, এ ছাড়াও সড়ক পরিকল্পনাতে (রোড ডিজাইন) ত্রুটি-বিচ্যুতিও রয়েছে। আগে এগুলো ঠিক করতে হবে। আর সড়কের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।

সিসি ক্যামেরা দিয়ে যানজট কমানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা খান মো. রেজওয়ান আরো বলেন, সিসি ক্যামেরা দিয়ে আসলে যানজট কমানো যাবে না। জট কমাতে হলে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলানিউজ