শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > সালমানের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন : অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক

সালমানের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন : অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অন্যতম মালিক সালমান এফ রহমান ও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ। উল্টো মিথ্যা মামলা দায়ের করায় ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। এদিকে রনির ১২ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আদালত সূত্র জানায়, চাঁদা না পেয়ে হত্যা এবং অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অন্যতম মালিক সালমান এফ রহমান ও দুই সাংবাদিককে রনির করা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান শাহবাগ থানায় দাখিল করা আবেদনটি গ্রহণ করেন। আদালত আবেদনের ওপর আগামী ২১ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেছে। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবু জাফর আদালতে এ প্রতিবেদন
দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জুলাই ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এর জন্য সংবাদ সংগ্রহের কাজে ক্যামেরাম্যান বকুলকে সঙ্গে নিয়ে ইমতিয়াজ মমিন রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির অফিসে যান। তারা সেখানে গেলে মারধরের শিকার হন। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সংসদ সদস্য রনি নিজেই প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহককে অতর্কিতে লাথি মারছেন। ওইদিন বিকালে রনির বিরুদ্ধে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনুছ আলী বাদী হয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রনিসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় হত্যা চেষ্টা, মারধর ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়।
একই দিন নির্যাতিত ওই দুই সাংবাদিকসহ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অন্যতম মালিক ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে আসামি করে রনিও পাল্টা মামলা করেন।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপরে দায়ের করা মামলায় ২১ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান রনি। কিন্তু পরবর্তীতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা দায়ের করে বাদী আসামির জামিন বাতিলের আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২৪ জুলাই রনির জামিন বাতিল করে। ওইদিনই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে রনিকে। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় রনি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আছেন। আগামী ১৩ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রনির জামিন আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক : কারাগারে থাকা গোলাম মাওলা রনির প্রায় ১২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই প্রেেিত রনির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
গতকাল রনির বিরুদ্ধে দাখিল করা দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মোট ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। রনির আয়কর রিটার্নের তথ্যেও ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া রনির বিরুদ্ধে আরও অধিকতর অনুসন্ধান করা হলে অবৈধ সম্পদের হদিস পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘ এক বছর অনুসন্ধান শেষে মঙ্গলবার রনির বিরুদ্ধে করা প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমান। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে রনির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করার সুপারিশ করেন। তবে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করলেও বর্তমানে রনি জেলে থাকায় তা কার্যকর হবে না। জেল থেকে ছাড়া পেলেই তা কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর থেকেই রনির বিরুদ্ধে তার নির্বাহী এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপা-দশমিনায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি থেকে শুরু করে অনেক অভিযোগ ওঠে। অল্প সময়ে প্রায় শূন্য অবস্থা থেকে অবৈধভাবে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অভিযোগ এলে তার বিরুদ্ধে প্রথম অনুসন্ধান শুরু করেন পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আহসান আলী। পরবর্তীতে তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমানের কাছে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা দুদকের কাছে থাকলেও দু’বছরেও অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে পেশ করা যায়নি। দীর্ঘদিন এ অনুসন্ধান ফাইলে বন্দি ছিল।