সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > ‘সামরিক চুক্তি’ নিয়ে কী ভাবছেন বিশ্লেষকরা

‘সামরিক চুক্তি’ নিয়ে কী ভাবছেন বিশ্লেষকরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সামরিক চুক্তি করা না করা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে দু’দেশের নিরাপত্তার সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়েই চলছে বেশি আলোচনা। সামরিক চুক্তি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে সংশয়-সন্দেহ। এসব চুক্তি নিয়ে অনেকেই অন্ধকারে রয়েছে। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সেখানে সামরিক কোনো চুক্তি হচ্ছে না, হবে সমঝোতা স্মারক।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন এখন উন্মুক্ত বিশ্বে সবার সাথে সবার সম্পর্ক ভালো থাকাই কাম্য, এটাই স্বাভাবিক। সম্পর্ককে উন্নত করতে এক দেশ আরেক দেশের সাথে চুক্তি এবং স্মারক স্বাক্ষর করছেন। এসব চুক্তি ও স্মারকের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে পরস্পরের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। সেই সাথে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে একের অন্যের পাশে থাকা।
তারা বলছেন বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশই নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো সমঝোতা করে না। এখনকার বিশ্বে সমঝোতার মূল ভিত্তিই হচ্ছে উভয় দেশেরই স্বার্থ সংরক্ষিত হতে হবে। এক দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কোনো সংঝোতা হয়না। যেখানে উভয় দেশের স্বার্থ অভিন্ন সেখানেই সমঝোতা হয়।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আমি কোনোভাবেই কৌশলগত কোনো সম্পর্ক স্থাপন হিসেবে দেখছি না। আমি দেখছি পরস্পর সমঝোতা ও সৌহার্দ্য হিসেবে।
আমি যতদূর জানতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে সামনে রেখে তিনটি বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রথমত: আমাদের স্থল সীমানা পর্যবেক্ষণে যৌথ টহলের ব্যবস্থা, যেখানে সমুদ্রসীমায় প্রসারিত করার প্রস্তাব আছে। দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশে সামরিক শিল্প স্থাপনে দুই দেশ বিনিয়োগ করবে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব সমরাস্ত্রের দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার পথে এগিয়ে যাবার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয়ত: আর যেগুলো আছে সেগুলো হলো- আমাদের সাথে ভারতের নানা সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে চুক্তি এবং সমঝোতা। নানাভাবে সহায়তা করার জন্যই এই উদ্যোগ।
জেনারেল আব্দুর রশিদ মনে করেন এখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব খর্ব করার কোনো অপশন নেই।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন আমাদের এখানে রাজনৈতিক যে উত্তাপ ছড়ানো হয়েছে তা আসলে বাস্তবসম্মত নয়। সেটা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ছড়ানো হচ্ছে।
বড়-ছোট প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে কার কেমন ফায়দা? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছোট দেশ-বড় দেশের ইক্যুয়েশনটা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত একটি বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড় দেশের পাশে ছোট দেশ আছে। ছোট দেশ থাকা মানে বড় দেশের কাছে স্বার্থ বিকিয়ে দিতে হবে এটি ঠিক নয়। তবে সম্পর্ক নির্ধারণের বিষয়টি নির্ভর করে ছোট দেশের সক্ষমতা, নেতৃত্বের গুনাবলী এবং সমানে সমানে কাজ করার দক্ষতার উপর।
‘বাংলাদেশ ভারতের পাশে একটি ছোট দেশ হলেও ভূ-কৌশলগত অবস্থান, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি, রাজনৈতিক দক্ষতা এবং কূটনৈতিক সক্ষমতা যথেষ্ট ভালো। তাই বড় প্রতিবেশী ভারতের পাশে ছোট প্রতিবেশী বাংলাদেশকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাছাড়া আমরা শিখেছি কিভাবে বড় দেশের সাথে সমানে সমান থাকতে হয়। তাই ভারতের সাথে আমাদের যে জুজুর ভয় দেখানো হচ্ছে আমি সেখানে ভয়ের তেমন কিছু দেখিনা,’ যোগ করেন আব্দুর রশিদ।
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরো বলেন, আরেকটি বিষয় হলো সব সময় আগ্রাসন প্রথমে প্রতিবেশির দিক থেকেই শুরু হয়। আবার এটাও কথা আছে বিপদের সময় প্রতিবেশিই আগে সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
‘আর এখন কোনো দেশ প্রতিবেশী দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না। যুদ্ধ দিয়ে নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেই পরস্পর সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশই নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো সমঝোতা করে না। এখনকার বিশ্বে সমঝোতার মূল ভিত্তিই হচ্ছে উভয় দেশেরই স্বার্থ সংরক্ষিত হতে হবে। এক দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কোনো সমঝোতা হয়না। যেখানে উভয় দেশের স্বার্থ অভিন্ন সেখানেই সমঝোতা হয়।
জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, এখন যেটি জানতে হবে সেটি হলো কার স্বার্থ কী। আসলে এখন সমঝোতা মানে হচ্ছে পরস্পর সমৃদ্ধির সমঝোতা। এগিয়ে যাওয়ার জন্য কার কতটুকু সহায়তা প্রয়োজন তা নিয়ে সমঝোতা।
আরেকটি হলো, আমাদের এই অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়ের সমঝোতা। জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার ইত্যাদি বিষয়গুলোও এর মধ্যে চলে আসে।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে এই সফর থেকে আমরা কী প্রত্যাশা করি? এমন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি একথা ঠিক, তবে আগের তুলনায় কমে এসছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমাদের দাবীর প্রতি ভারত সরকারের সহনশীলতা আছে। তারা আমাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেনি। তবে আমাদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব কারণে সীমান্তে গুলির ঘটনা ঘটে, সেসব কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানে আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি বিষয়ে অনেক কিছু হচ্ছে। আসলে প্রতিরক্ষা চুক্তি নতুন কিছু নয়। চীন-রাশিয়াসহ একাধিক দেশের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে। এখন এটার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আকার বড় হতে পারে।
পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই সমরাস্ত্র ক্রয় করা হতে পারে। এখন একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের কোথায় থেকে নিলে ভালো হবে সেটাই দেখতে হবে। দাম এবং মানের দিক থেকেও বিবেচনা করতে হবে।
ইশফাক এলাহী চৌধুরী আরো বলেন, যতদূর জেনেছি ভারতের সাথে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হচ্ছে, তাতে ভারতের সাথে প্রশিক্ষণ বিনিয়ময়, অভিজ্ঞতা বিনিময়ও থাকছে।১১১১প্রতিবেশির সাথে সমঝোতার বড় সুফল হচ্ছে শান্তি বজায় রাখা। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিই হচ্ছে সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। আমাদের সাথে পৃথিবীর ক্ষমতাধর ও সমরাস্ত্রের দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক ভালো। যেমন রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, জাপানসহ আরো অনেকের সাথেই সম্পর্ক ভালো। ভারতের সাথেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। এখন সেটাকে আরো ভালো করার জন্য দুদেশ আন্তরিক।
তিনি বলেন, মাদক ও মানব পাচার রোধে দুদেশের সীমান্ত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে একসাথে।
সব মিলিয়ে তিনি মনে করেন পারস্পরিক সম্পর্ক যত বৃদ্ধি পাবে, শান্তি শৃঙ্খলা তত উন্নত হবে।
বড়-ছোট প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে কার কেমন ফায়দা? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফায়দা বিষয়টি আসলে যার যার দিক থেকে যেভাবে ভাবা হয়।
শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে সীমান্তে মানুষ হত্যার বিষয়ে ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা করছি। আমরা ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সাথে আলাপ করে সেদেশের সরকারের কাছে একটা সুপারিশ দিবো।
এক প্রশ্নের জবাবে কাজী রিয়াজুল হক আরো বলেন, আসলে সীমান্তে যারা গুলি করে থাকে তারা ম্যাক্সিমাম হচ্ছে অবাঙালী। তাদের সাথে আমাদের ভাষাগত দূরুত্বও আছে। তাদের ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরবেন। আমরা তা শুনে কি কি হতে যাচ্ছে আর কি হচ্ছে না তার ভিত্তিতে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব,’ বলেন কাজী রিয়াজুল হক। পরিবর্তন