শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > সাবেক মন্ত্রী এমপিরা নিষ্ক্রিয়, ক্ষুব্ধ খালেদা

সাবেক মন্ত্রী এমপিরা নিষ্ক্রিয়, ক্ষুব্ধ খালেদা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
টানা অবরোধে মাঠে নেই বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বড় একটি অংশ। এ নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির সাংগঠনিক ৭৫ জেলার মধ্যে অন্তত ৫০টির সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবার অনেকে এলাকায় থেকেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় বিকল্প নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। টেলিফোনে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওপর আস্থা রেখেই বিএনপি-প্রধান দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে অবরোধের গতি বাড়াতে আবারও যুক্ত হচ্ছে হরতাল। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশে একযোগে হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। আগামীকাল রবিবার থেকেই এ কর্মসূচি কার্যকর হতে পারে বলেও একাধিক সূত্র জানায়। নতুন আন্দোলন কর্মসূচি নির্ধারণে কাজ করছে বিএনপি জোটের লিয়াজোঁ কমিটি। আজকের মধ্যেই অবরোধের পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। নতুন নির্বাচনের দাবি মেনে না নিলে আগামী মাস থেকে অসহযোগেও যেতে পারে বিএনপি জোট।
আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় নেতাদের প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নিঃসন্দেহে সাহসিকতার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। এতে আমরা আশান্বিত। তবে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। তা ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে হয়তো অনেকের মধ্যে একধরনের ভীতিও কাজ করছে। তার পরও আমি মনে করি, সময়ের প্রয়োজনে আমাদের পেছনে ফেরারও সুযোগ নেই। আমরা সে পথেই এগোচ্ছি।’ এদিকে তৃণমূণের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের বলেছেন, ‘কে বড় নেতা, কে ছোট নেতা তা দেখার এখন সময় নেই। আমি আপনাদের দায়িত্ব দিচ্ছি। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। গ্রেফতার এড়িয়ে রাজপথে থাকুন। সময় হলে আমি আপনাদের পাশে থাকব।’ সূত্রমতে, আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বরিশাল বিভাগে বিএনপির সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুরো বিভাগের ২২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান ও সাবেক এমপি আবুল হোসাইন মূলত বরিশালের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, বাকি নেতাদের প্রায় সবাই নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, নাজিম উদ্দিন আলম, গাজী বাবুল, এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সুবহান, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক, কর্নেল (অব.) শাহজাহান, হাফিজ ইব্রাহীম ও ইলেন ভুট্টো। ৫ জানুয়ারিতে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর তাদের রাজপথে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। অবশ্য এদের মধ্যে অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থান করছেন। যোগাযোগ করা হলে বরিশালের নেতা ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এর আগে যত গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে, তাতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই বেশি ভূমিকা পালন করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনসহ বিভিন্ন সময়ে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে দুঃসময়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করছেন। আমাদের আর পেছনে ফেরারও কোনো সুযোগ নেই।’
হরতাল-অবরোধে চট্টগ্রাম বিভাগের হাইপ্রোফাইলের নেতারাও আড়ালে চলে গেছেন। বিভাগে ১৬টি জেলা রয়েছে। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোরশেদ খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গোলাম আকবর খোন্দকারসহ প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন। তবে টানা অবরোধের পর প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ দেশের বাইরেও অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম দাদু ভাই, নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ আরও বেশ কয়েকজন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। রংপুর বিভাগে বর্তমানে কারাগারের বাইরে থাকা নেতাদের মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। রাজশাহী বিভাগে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। সিলেট বিভাগে আন্দোলনের মাঠে নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাসের রহমান, সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সাল, শফি আহমেদ চৌধুরী, ড. মকবুল হোসেনসহ দলের নির্ভরযোগ্য মুখগুলো। তাদের প্রায় সবাই আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। অবশ্য সুনামগঞ্জের নাসির চৌধুরী, কলিমউদ্দিন মিলন, নজির হোসেন, জয়নুল জাকেরিন ও ফজলুল হক আসপিয়া আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় বলে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ ঢাকা মহানগর ও জেলার ২০টি সংসদীয় আসনের প্রায় সব সাবেক এমপি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। নিষ্ক্রিয়ের তালিকায় রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আবদুল মান্নানও।
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুর রহমান পটল, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, লুৎফুর রহমান আজাদ, কাজী কামাল, মনিরুল হক চৌধুরী, মনজুরুল আহসান মুন্সিসহ দলের বড় একটি অংশই অবরোধে মাঠছাড়া। এর মধ্যে শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও শেখ সুজাত মিয়া দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্দোলনে তৃণমূলের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় নেতা কিংবা সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবাই কম-বেশি কাজ করে যাচ্ছেন। দু-চার জন ব্যতিক্রম সব জায়গায় থাকে।’
তালিকা হচ্ছে নিষ্ক্রিয়দের : সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও পৃথকভাবে নিষ্ক্রিয় নেতাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। অনেকের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন তারেক রহমান। এর পরও যদি কেউ নিজেকে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরিয়ে রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে হবে। তা ছাড়া আন্দোলনে যারা সক্রিয়, তৃণমূলের এমন অনেক নেতাকেই কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ করা হবে। বেগম খালেদা জিয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের নিরাশ না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সময়-সুযোগে তাদের যথাযথ স্থানে নিয়োগ দেওয়ার কথাও বেগম জিয়া সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন।
চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন : চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে একটি শিক্ষক প্রতিনিধি দল দেখা করতে গেলে বেগম জিয়া তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। পরে বেরিয়ে এসে ইউসুফ হায়দার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় বেগম জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জানান তিনি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, মোরশেদ হাসান খান, শফিউল্লাহ, তাহমিনা আকতার টফি, ইসরাফিল রতন প্রমুখ। বাংলাদেশ প্রতিদিন