স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মঙ্গলবার রাতে ফের একটি জিরাফ মারা গেছে। আর এর মধ্য দিয়েই পুরুষশূন্য হলো পার্কের জিরাফ পরিবার। এর আগে ওই পার্কে আরও ৬টি জিরাফ মারা গেছে।
পার্কের এ অবস্থার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. নিজাম উদ্দিনসহ কয়েকজনের কর্তব্যে অবহেলাকেই দায়ী করেছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েক কর্মকর্তা।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় দুইমাস ধরে ওই জিরাফটি পাতা জাতীয় খাবার খেলেও দানাদার খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি পার্কের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. রফিকুল আলম, ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটরসহ কয়েকজন চিকিৎসকের নজরে দেয়া হয়। পরে তারা ওই জিরাফটির জন্য ব্যবস্থাপত্রসহ বিশেষ যতœ নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
কিন্তু বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে গিয়ে ওই জিরাফটির মৃতদেহ দেখতে পান কর্তব্যরত পার্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে তার মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় এবং মৃতদেহটি পার্ক চত্বরে মাটি চাপা দেয়া হয়।
এ যাবৎ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ছোট-বড় ৭টি জিরাফের মৃত্যুতে পার্কে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজাম উদ্দিনের গাফিলতিকে দায়ী করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পার্ক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, বন্যপ্রাণি সুপারভাইজার মো. আনিসুর রহমান, সরোয়ার হোসেন খানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
তারা জানান, বন্যপ্রাণী চিকিৎসক নিজাম উদ্দিনের জন্য পার্কের ভেতর আবাসিক সুবিধা থাকার পরও তিনি থাকেন পার্ক থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের আবাসিক এলাকায়। বিভিন্ন অজুহাতে পার্কেও ঠিক মতো আসেন না। তিনি পার্কের প্রতিষ্ঠাকালীন ভেটেরিনারি সার্জন (চিকিৎসক)। এমতাবস্থায় কয়েক মাস আগে হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন নামের ভেটেরিনারি অফিসার পার্কে যোগ দেন। তিনি নিজাম উদ্দিনের কথা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পার্ক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বন্য প্রাণিরা যেহেতু কথা বলতে পারে না। তাই তাদের যতœ নিতে হয় খুব কাছ থেকে। কিন্তু নিজাম উদ্দিন তা করেন না। এ ব্যাপারে পার্কের প্রকল্প পরিচালককেও অবগত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা থেকে ১০টি জিরাফ এ পার্কে আনা হয়েছিল। তারা এ পার্কে শাবক জন্ম দেয় চারটি। চারটি বাচ্চার মধ্যে একটি বাচ্চা সাব-এডাল্ট অবস্থায় মারা যায়। এছাড়াও ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কয়েক মাসের ব্যবধানে মোট ৬টি এডাল্ট জিরাফ মারা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকটি পুরুষ জিরাফও ছিল। গত মঙ্গলবার রাতে সর্বশেষ পুরুষ জিরাফটির মৃত্যুর পর পার্কে বর্তমানে ৭টি জিরাফ রয়েছে। যারা সবাই মাদি। তবে শুধু জিরাফ নয়, অবহেলায় বিভিন্ন পশু-পাখিও অকালে মারা গেছে।
পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. সামসুল আজম বলেন, তিনিও পার্কে বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করতে গিয়ে নিজাম উদ্দিনকে পাননি। যা পরিদর্শন বুকেও লেখা রয়েছে। অতিসত্ত্বর পার্কে পুরুষ জিরাফ আমদানি করা হবে। তবে আশার কথা হলো পার্কের আরো দু-একটি জিরাফ গর্ভধারণ করেছে। তাদের থেকেও পুরুষ জিরাফ জন্ম নিতে পারে।
এ ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি সব সময় পার্কে অবস্থান নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেন।